রমজান মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন বিভাগ, ব্যাচ, জেলা সংগঠন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দলবদ্ধভাবে ইফতার আয়োজন করে, যা এক ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। বড় পরিসরে আয়োজিত গণইফতারও চোখে পড়ার মতো। মিলেমিশে এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়।
এই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন ছড়িয়ে দিতে জাবি শাখা ছাত্রদলও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশনায় পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পাসের ২১টি হলে ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে নিহত সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল’ শিরোনামে আয়োজন করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল সংখ্যা ২১টি, যার মধ্যে ১১টি ছেলেদের এবং ১০টি মেয়েদের হল। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, আল বেরুনী হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, মীর মোশাররফ হোসেন হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল, ২১ নম্বর হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, মওলানা ভাসানী হল ও শহীদ সালাম-বরকত হলে ইফতার মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ছাত্রদল। ১৬ মার্চ (রবিবার) ১৫ রমজান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে সম্মিলিত ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে মেয়েদের দশটি হলের ইফতার কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়।
শুক্রবার (২১ মার্চ), ২০তম রমজানে জাবির আ. ফ. ম. কামাল উদ্দিন হলে শাখা ছাত্রদলের আয়োজনে এক বিশেষ ইফতার ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে তাদের ধারাবাহিক গণ-ইফতার কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সূর্য ডোবার পর মাগরিবের ‘আল্লাহু আকবার’ আজানের ধ্বনির সঙ্গে হল প্রাঙ্গণ ভ্রাতৃত্বের আবহে পরিণত হয়। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও দলের নেতাকর্মী একসঙ্গে ইফতার করেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও অসহায়রাও বাদ পড়েনি; তাদের মাঝেও ইফতার বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, “পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে প্রতিটি হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে। আজকের ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে আমরা সফলভাবে জাবির ২১টি হলে গণ-ইফতার সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি ইফতার অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করেছি।”
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, “পতিত স্বৈরাচার আমলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পবিত্র রমজান মাসে মিলেমিশে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে হলের সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে বসে ইফতার করার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। জাবি ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারা তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রকল্যাণমূলক কাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণ-ইফতার আয়োজন সম্পন্ন করেছি। ইফতারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি; আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও অংশগ্রহণ অনেক বেশি ছিল।”
শাখা ছাত্রদলের এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের কার্যক্রম ছাত্রসমাজের মধ্যে সহমর্মিতা ও ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতেও এমন মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই জাবি ছাত্রদলকে।”