দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং দোষীদের যথাযোগ্য শাস্তি দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টা বরাবর ৫ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছে ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ। আজ (১২ মার্চ) দুপুর দুইটায় উপদেষ্টাদের নিকট স্মারকলিপি জমা দেয় তারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “সারাদেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার ক্রমবর্ধমান হার বাংলাদেশের আপামর নারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভএবং অনিরাপত্তাবোধের সঞ্চার করেছে। ব্যাস, পেশা, ধর্ম নির্বিশেষে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। নারীরা নিজের ঘরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নারীর প্রতি সহিংসতাকারীদেরকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, আটক করলেও তাদেরকে জামিনে ছেড়ে দেয়ার মত ঘটনা ঘটছে। আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড লিখিত থাকলেও তা কার্যকর করা হয়না।
আমরা দেখেছি, পূর্ববর্তী আলোচিত অনেক ধর্ষণের বিচার হয়নি কারণ ধর্ষণগুলো সংগঠিত হয়েছে সমাজের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের দ্বারা। মোসারাত জাহান মুনিয়ার ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার হয়নি, সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার হয়নি। র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার বিচার হয়নি।
আমরা দেখেছি ধর্ষণসংক্রান্ত আইনি পরিভাষা এবং সংজ্ঞায়নে অস্পষ্টতা থাকায় ধর্ষকরা আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি পেয়ে যায়। সম্প্রতি শিশু অছিয়ার ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় তার প্রতিফলন ঘটছে।”
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, “গত ১ মার্চ, রোজ রবিবার প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ ঘোষনা করা হয়। নারীর প্রতি সংঘটিত ধর্ষণ, নিপীড়ন, নারীবিদ্বেষী মব আগ্রাসন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই মঞ্চের দৃঢ় অবস্থান। ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চের উদ্যোগে ১০ মার্চ, সোমবার, সন্ধ্যা ৭:৩০ ঘটিকায় শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিলের মধ্য দিয়ে রাজুভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেয় এবং ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৫ দফা দাবি পেশ করে।”
দাবিগুলো হলো-
১. আসিয়ার মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং ১ মাসের মধ্যে আসিয়ার ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন আসিয়ার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
৩. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।
৪. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন ও সেলের কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।