অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় অসাধু জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এবং অর্থের বিনিময়ে চোরাপথে বাংলাদেশি পরিচয় পেতে তৎপর। বাংলাদেশি পরিচয়টিই তাদের কাছে লোভনীয়। কিন্তু এর বিপরীত ঘটনাও ঘটেছে।
দরিদ্র কিছু বাংলাদেশি ত্রাণের লোভে তাদের পরিচয় গোপন রেখে রোহিঙ্গা তালিকায় নাম তুলেছে। আবার অবস্থাসমপন্ন কিছু বাংলাদেশিও প্রতারণা করছে। তালিকাভুক্ত হয়ে তারা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে নিয়মিত ত্রাণও নিচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন গতকাল সোমবার(৪ মার্চ)এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশি হয়েও ত্রাণের লোভে রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছে এমন ১০০ জনের তথ্য আমাদের হাতে আসে। ভুল সংশোধন করতে যারা আবেদন করেছে তাদের তথ্য।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা যাতে অন্তর্ভুক্ত না হতে পারে, তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অনেক বাংলাদেশিই রিলিফ পাওয়ার আশায় স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে এটা জানা যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে যারা সেখানে আঙুলের ছাপ দিয়েছে, তারা এ দেশে ভোটার হতে পারে না। ভোটার হয়ে থাকলেও বাদ পড়ে যায়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এখন রিলিফ কমে যাওয়ার জন্য ওই সব ব্যক্তি নিজে থেকেই ভুল সংশোধনের আবেদন করছে। সেখানে এমন পরিবারও রয়েছে, স্বামী বাংলাদেশি কিন্তু স্ত্রী রোহিঙ্গা। সেখানে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’সংবাদমাধ্যমের এক অনুসন্ধানেও এই পরিস্থিতির সত্যতা মেলে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের সময় রোহিঙ্গা হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করে বিপাকে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারাই এমন ফাঁদে পা দিয়ে এখন পরিত্রাণ পেতে ছুটছে প্রশাসন ও নির্বাচন অফিসের দ্বারে দ্বারে। তারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ঢলের সময় উখিয়া ও টেকনাফে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেশি-বিদেশি ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা ছিল। এ সময় ত্রাণের লোভে পড়ে অনেক বাংলাদেশি স্থানীয় বাসিন্দা ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে। এটি উদ্বেগজনক।