এই প্রজাতির বানরের সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে ভারতের আসামে। আর সেজন্যই বানরটির নামকরণ করা হয়েছে আসামি বানর। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে একটি মাত্র আসামি বানর। বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির এ বানরের দ্বিতীয়টি নেই এ উদ্যানে। দ্রুত সঙ্গীর জোগাড় না হলে বানরের এ প্রজাতিটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা পরিবেশবিদদের।
সরেজমিনে সাতছড়ি উদ্যানে বানরটিকে নিঃসঙ্গভাবে ঘুরতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম প্রজাতির হওয়ায় দেশীয় বানর কিংবা অন্য বানরজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে তেমন ঘুরতে পারে না। তাই প্রায়ই একে দলছুট থাকতে দেখা যায়।
সাতছড়ি বনে আসামি বানর প্রসঙ্গে বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে উদ্যানে একটিই মাত্র এ প্রজাতির বানর দেখা যাচ্ছে। আসামি বানর মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের বাসিন্দা। দিবাচর, বৃক্ষবাসী ও ভূমিচারী। সচরাচর পুরুষ, স্ত্রী, বাচ্চাসহ ৫ থেকে ১৫টির দলে বাস করে। দলে একাধিক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ থাকতে পারে। ফল, পাতা, ফুল, শস্যদানা, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খায়। নিচু ও মোলায়েম সুরে পিউ-পিউ স্বরে ডাকে।
প্রকৃতি সংরক্ষবিদ ও ফটোগ্রফার আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, আসাম বান্দর বা বোঢ়া বানর নামেও পরিচিত। বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন বানরটিকে সাতছড়ি ছাড়া মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙামাটির শুভলংয়ে দেখার তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, এরা মোটামুটি বড় আকারের বানর। তবে অন্যান্য বানর প্রজাতির তুলনায় লেজ বেশ খাটো। নাকের আগা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫১ থেকে ৭৩ সেন্টিমিটার। লেজ ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন ১০ থেকে ১৪ কেজি এবং স্ত্রীর ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি। মাথা বড় ও বর্গাকার। মুখমণ্ডল চওড়া ও গাঢ় বাদামি থেকে লালচে। দেহের ওপরের লোমের রং বাদামি-ধূসর, নিচের লোম সাদাটে-ধূসর। মাথার চাঁদি মসৃণ। প্রাপ্তবয়স্ক বানরের গাল ও থুতনিতে স্পষ্ট হালকা পীতাভ-সাদাটে দাড়ি থাকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, প্রয়োজনে ভারত অথবা বিদেশ থেকে কিছু আসামি বানর এনে এ বনে অবমুক্ত করা হোক। এতে বানরটির জন্য প্রজননে সহায়ক হবে।