আদালত চত্বরে ছেলেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার মুহূর্তে পেছন থেকে ছুটে আসেন এক মা,ছেলের পিঠে চাপড়ে বলেন-‘ভয় নেই বাবা, নো চিন্তা’। কিন্তু কী ঘটেছিল সেদিন?
কোটা আন্দোলনের সময় আদালত চত্বরে মায়ের সাহস জোগানো দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিলো। তরুণটির পরিচয়–তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর ছেলে, ওমর শরীফ মোহাম্মদ ইমরান সানিয়াত।
মা-ছেলের আবেগঘন মুহূর্ত দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলো, এবার উঠে এসেছে তার উপর চলা ভয়াবহ নির্যাতনের বিবরণ।
রিমান্ডের প্রতিটি দিন সানিয়াত সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর প্রার্থনা করতেন। রাতে তার মাকে ফোনে রেখে নির্মমভাবে প্রহার করা হতো, যাতে মা সন্তানের আর্তনাদ শুনতে পান।
রাতের খাবার কেনার জন্য ছোট ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন সানিয়াত। দোকান থেকে কেক কিনেই বের হতেই ডিবির জ্যাকেট পরা সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। এরপর গাড়িতে তোলে নিয়ে যায়।
২৮ জুলাই, রাত আনুমানিক আড়াইটা। ছেলের চিন্তায় মন ছটফট করছিল তার। হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠল স্ক্রিনে । কিছুক্ষণ দ্বিধা নিয়ে, শেষমেশ ফোনটা ধরলেন। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’, কোনো উত্তর নেই। শুধু দূর থেকে ভেসে আসছিল আর্তনাতের শব্দ। ফোনের ওপাশ থেকে শুনতে পারছিলেন ছেলের যন্ত্রণাক্লিষ্ট, কান্না ভেজা কণ্ঠ।
ওই সময়ে ছেলের জন্য কিছু করতে না পারার অসহায়ত্ব যেন তার বুকে পাথরের মতো চেপে বসে। ‘ওটা সানিয়াত ছিল’, কান্না ভাঙা কণ্ঠে বললেন তিনি। “ওরা আমাকে জোর করে শুনিয়েছে, কীভাবে আমার ছেলেকে নির্যাতন করা হচ্ছে। একজন মা কীভাবে এটা সহ্য করতে পারে? আমার ছেলে আগে কখনো জেলেও যায়নি, পেটানোর তো প্রশ্নই আসে না।”
একদিন পর সানিয়াতকে আদালতে হাজির করা হয়, পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় মা তাকে দেখে দৌড়ে এসে পিঠ চাপড়ে সাহস দেন। এরপর থেকেই তার উপর চলে লাগাতার টর্চার। ভাইরাল ভিডিও দেখে আরও ক্ষিপ্ত হয় ডিবি সদস্যরা, টর্চারের মাত্রা চরমে ওঠে।
.উল্লেখ্য, ছেলেকে হারিয়ে একদিন পর মর্গে পর্যন্ত খুঁজতে যান মা। প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হতো, শরীরের নিচের অংশ ফুলে রক্ত জমাট বাঁধত।
সানিয়াত, মুক্তি পাওয়ার পর লাঠির উপর ভর করে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবরও নিয়েছেন।