হারিয়ে গেছে হারিকেন, জরিয়ে আছে শৈশবের স্মৃতি

New-Project-2025-02-19T175626.032.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক
গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা শুনেছেন অনেকেই। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে অভিভাবকের পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও গল্প শোনা গেছে। হারিকেনের আলো জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে নৈসর্গিক টিমটিমে আলোয় আলোয় জ্বলত হারিকেন।
বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে গ্রাম বাংলায় কমে গেছে হারিকেন জ্বালানোর প্রথা। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের মতো বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন। ব্যতিক্রম নয় উপকূলীয় জনপদ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকেও হারিয়ে গেছে হারিকেন।
জানা গেছে, রাঙ্গাবালীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো টুকিটাকি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে ব্যাটারিচালিত বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় হয়তো এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস।
উপজেলার সেনের হাওলা গ্রামের বয়বৃদ্ধরা জানান, একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতেন। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতের অস্থায়ী দোকান।
রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানাটানি চলতো। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ।
তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এ ছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও আর দেখা যায় না।
হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাাম্য যানবাহনেও। খালে বা নদীতে নৌকার মাঝিরা রাতের বেলায় ব্যবহার করতেন হারিকেন। রাতে কোনো প্রয়োজনে গ্রামের কারো বাড়ি থেকে অন্য কারো বাড়ি যেতে হলে হারিকেন নিয়ে যেতেন। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে গেছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।
রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের  প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, যে সময় হারিকেনের প্রচলন ছিল সেই সময় গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদারদের পাহাড়ার জন্য থানা ও উপজেলা পরিষদ থেকে হারিকেন দেওয়া হতো।

Leave a Reply

scroll to top