আজ সরস্বতী পূজা, অঞ্জলির আগে বরই খেলে কি হয়?

New-Project-35.jpg
২৪ ঘন্টা বাংলাদেশ ডেস্ক

মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে মর্ত্যে আগমন ঘটে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর। সনাতন ধর্ম মতে, বিদ্যা, বাণী, শুদ্ধতা ও সুরের দেবী সরস্বতী। সরস্বতী পূজা আজ সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি)। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এ ধর্মীয় উৎসব প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়।দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে সরস্বতী পূজার।

সেই সাথে পুজার আগে থেকেই চারিদিকে বাহারি সব বড়ইয়ের সমাহার। কোনওটার সবুজ আপেলের মতো গড়ন, কোনওটা আবার চেরির মতো। সুস্বাদু ফল হিসেবে অনেকেই কুল(বরই) পছন্দ করেন। তবে সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রথার মধ্যে অন্যতম হল যে পূজার আগে কুল খেতে নেই। পূজার আগেই এখন বাজার ছেয়ে গিয়েছে নানা রকমের টোপা কুল ও নারকেলি কুলে। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আপাতত সরস্বতী পূজার আগে আর কিছু করার নেই। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে সরস্বতী পূজার আগে বরই খেলে স্বয়ং বিদ্যার দেবী রুষ্ট হন।

সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেকেই ছোটবেলা থেকেই বাগদেবীর আরাধনার আগে কুল খান না। কিন্তু অনেকে জানেন না এটি তারা কেন মেনে চলেছেন। পৌরাণিক কাহিনি ছাড়াও সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক একটি কারণ রয়েছে। কিন্তু কেন এই প্রথা প্রচলিত তা জেনে নেওয়া যাক।

পৌরাণিক কাহিনি
এই লোকাচারের পেছনে শাস্ত্রের একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে একবার মহামতি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে তপস্যায় বসেছিলেন। এই তপস্যা শুরু করার আগে সেখানে একটি কুলের বিজ রেখে এসেছিলন সরস্বতী। দেবী ব্যাসদেবের কাছে শর্ত রাখেন যে যতদিনে এই বিজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে, সেই গাছে নতুন কুল হবে এবং সেই কুল পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পরবে ততদিন তাঁকে তপস্যা চালিয়ে যেতে হবে। তবেই তিনি তুষ্ট হবেন। দেবীর দেওয়া এই শর্ত মেনে নিয়েই ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন। আর যেদিন তাঁর মাথায় নতুন কুল পরে সেদিন তিনি বুঝতে পারেন যে, বাগদেবী তাঁর তপস্যায় প্রসন্ন হয়েছেন। আর সেই দিনটি ছিল মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষের পঞ্চমী তিথি। হিন্দু ধর্মানুযায়ী, সেইদিন থেকে পালিত হয় বসন্ত পঞ্চমী। প্রাচীনকাল থেকে এখনও পর্যন্ত ওই রীতি মেনে চলেছেন অনেকে। যে কারণে সরস্বতী পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আগে অবধি অধিকাংশ ব্যক্তিই কুল খান না।

সামাজিক কারণ
আমাদের দেশের মূলত কৃষিপ্রধান অর্থনীতি। তাই যে কোনও নতুন ফসলকে প্রথমে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য উত্‍সর্গ করা হয়, তারপর তা খাওয়ার প্রথা হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত। এই কারণেই নতুন ধান উঠলে নবান্ন উত্‍সব পালন করা হয়। শীতকালে এই সময় কুল গাছে প্রথম ফল ধরে। তাই আগে দেবী সরস্বতীকে তা নিবেদন করে তবেই তার প্রসাদ হিসেবে এই ফল খাওয়ার প্রথা প্রচলিত হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে।

বৈজ্ঞানিক কারণ
তবে এর পিছনে একটি বৈজ্ঞানিক কারণও পাওয়া যায়। সরস্বতী পুজো মানে শীতের অবসান ও বসন্তের শুরু। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে নানা রকম অসুখ বিসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরস্বতী পুজোর সময়ই কুল পাকতে শুরু করে। তার আগে কাঁচা কুল খেলে পেটের গোলমাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে কাঁচা বা কশযুক্ত কুল যদি কেউ খান, তা হলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

Leave a Reply

scroll to top