প্রতিশোধ নিয়ে যা বললেন জামায়াতে আমীর ডা: শফিকুর রহমান

New-Project-39.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সকল গুম খুনের বিচার হতে হবে।

শনিবার  (১ ফেব্রুয়ারি) সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে  প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম খুন নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।

তিনি বলেন, একটি দল এদেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। আবার তাদের দ্বারাই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। সংখ্যালঘুদের উপর এসকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আমি জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য। তৎকালীন সরকারকেও একই চিঠি লিখেছিলাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করবে আওয়ামী লীগ আর দায় চাপাবে জামায়াতের উপর। এজন্যই তারা তদন্ত করে নাই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগষ্টের ৩-৪ তারিখ সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যাদের নাম পরিচয় এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এখনও হাসপাতালে ২২২ জন পঙ্গুত্ব বরণকারী, ৭শ জন দুচোখ হারা, একচোখ হারানো আরও ৫শ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গুম খুন হত্যাসহ ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে।

আমীরে জামায়াত বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত একটি আদর্শবাদী সংগঠন। আমাদের নেতারা বালু মহাল, জলমহাল, হাটবাজার দখলে জড়িয়ে পরে না। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাটে বিশ্বাসী নয়। তার জানে এসব কাজ হারাম। এটাই জামায়াতের নৈতিক শিক্ষা।

তিনি বলেন, যে দল বা যারাই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বে জড়াবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরনকারী সকল শহীদদের স্মরণ করে বলেন, যাদের জীবন দানে আমরা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে। তিনি নিরীহ মানুষের অযথা মামলায় হয়রানি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশটা সকলের। এদেশের সকল নাগরিক ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। কিছু দুষ্ট লোকের জন্য আমাদের সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা। ৫ আগষ্টের পর জামায়াত নেতাকর্মীরা টানা ১৫ দিন মন্দির-মঠ পাহারা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে।

জামায়াত আমীর আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে যারা আমাদেরকে কথায় কথায় বিদেশে পাঠানোর কথা বলত তারাই আজ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছে। শহীদদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতাদেরকে যে জল্লাদ ফাঁসি দিয়েছিল সেই জল্লাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। যখন আমাদের নেতাদের ফাঁসির সংবাদ দেওয়া হয় তারা তা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে দুই রাকাআত নামাজ পড়েন। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি কাপড় পড়ে শাহাদাত আঙুলির ইশারায় ফাঁসিকে স্বাগত জানান। শাহাদাতের মর্যাদা পেতে উৎফুল্ল ছিলেন আমাদের নেতারা।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সুনামগঞ্জের প্রয়াত সাবেক তিন জেলা আমীর আহমদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ, হাতিমুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ দেশের ২৩ ভাগ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। এখানকার বালি পাথর মাছ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এই জনপদের মানুষ। দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তি যেন আর ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তিনি উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার সুনামগঞ্জবাসীর প্রতি আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন করা হয়েছে। জামায়াতকে রাজাকার জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানেও একটি দল চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পুরনো কায়দায় জামায়াতের নামে ট্যাগ লাগাতে চায়।

 

Leave a Reply

scroll to top