প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সারা দেশে সব শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছালেও জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে খোলা বাজারে। কতিপয় অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই অবৈধ মজুতদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রয় করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে খোলাবাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার বইসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের বাংলা বাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এ সব বই জব্দ ও দুজনকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তার দুজন হলেন- সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫), দেলোয়ার হোসেন (৫৬)।
বৃহস্পতিবার(২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশে মজুদ করেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে। সিরাজুল ও দেলোয়ারের বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে অবগত করা হবে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তর করা হবে।
এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনসিটিবির দুইটা গোডাউন রয়েছে একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়, এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে এ রকম ১১৬টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কিনা বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গ্রেফতার সিরাজুল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়ছিল জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সে ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিল। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বছরের প্রথম দিনেই স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রচলন চলছে বিগত ২০১০ সাল থেকে। তবে নানা কারণে এই বই বিতরণের উৎসবে ছেদ পড়েছে এবার। এরই মধ্যে খোলাবাজার থেকে এই বিপুল পরিমাণ বই জব্দের তথ্য দিল ডিবি।
তবে এর আগে এসেছিল বাংলা বাজারের ব্যবসায়ীদের বিনা মূল্যের বই কারসাজির অভিযোগ। বিশেষ করে বাংলাবাজারের লাইব্রেরির মালিক আজিজ মোল্লা ও উজ্জ্বল নামে দুজনের কাছ থেকে ই সাপ্লাই করা হয় নীলক্ষেতে পাওয়া বিনামূল্যের বই গুলো।
অভিযোগ আছে নীলক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দোকানেও পাওয়া যায় বিনামূল্যের বই।তাদের কিছু নামও পাওয়া গিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মীম বুক হাউজ, প্রিমিয়ার বুক হাউজ, আরাফাত বুক হাউজ, শহীদ বুক সেন্টার, বুক লাইন এবং আরিয়ান বুক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মীম বুক হাউজ অন্য সব লাইব্রেরি মালিকদের কাছে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছে।