দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে যান। এরপর প্রায় ২৫ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ অবরোধ করে রাখেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার কারণে তার পদে থাকার অধিকার নেই।”
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের জনগণ রাতে বাইরে বের হলে জীবন হুমকির মুখে পড়তেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি যদি দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে গদি ছেড়ে দেন আমরা বিকল্প কাউকে ভেবে নেব। গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন জেলায় যখন বিপ্লবীদের উপর বিভিন্নভাবে হামলা হচ্ছিল তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডেভিল হান্ট নামে একটি অপারেশন চালু করে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবীদেরকেই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পদে এখনো আওয়ামী দোসররা বহাল রয়েছে। এইসব আওয়ামী দোসরদেরকে অনতিবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে। অন্যথায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যদি যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারেন তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কঠোরতর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের সবার আশা আকাঙ্ক্ষার সরকার গঠিত হয়েছিল। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের যে সেক্টরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিলো আমরা দেখেছি সেই সেক্টরেই সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা এর মধ্যে একটি ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। সেনাবাহিনী সরকার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে রাজপথে থাকার পরেও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা দিনদিন অবনতি হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অন্তবর্তীকালীন সরকারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে ছিনতাই হচ্ছে, আমার বোনেরা বাসের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে যা আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জাসদ চরমপন্থী কতৃক আমার ভাইদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আমার মায়ের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। এগুলা দেখে সেই মাৎসন্যায়ের কথাই মনে পড়ে যায়। আমরা আপনাদেরকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিচ্ছিনা, আপনারা যদি সম্মানের সহিত আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তাহলে করেন আর না হয় সম্মানের সহিত পদত্যাগ করেন।
জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় আধ ঘণ্টার মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। সারা দেশে ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে। দেশে গুম, খুন, ছিনতাই বেড়েই চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যদি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে না পারেন তাহলে আপনারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আমরা দায়িত্ব নেব একটা গুম, খুনও হবে না। মানুষ বাসা থেকে বের হতে নিরাপদবোধ করছে না। বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো তৎপরতা ও ভূমিকা পালন করছে না। এই মুহূর্তে দেশের ল অ্যান্ড অর্ডার দুর্বল হয়ে পড়েছে তাই অবিলম্বে এই সমস্যা সমাধানে অন্তবর্তীকালীন সরাকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
