জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন ‘তরী’-এর উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তরী স্কুলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় পথশিশুদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তাদের নতুন ঈদবস্ত্র দেওয়া হয়।
সোমবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে তরী চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন তরী স্কুলের সভাপতি, সেক্রেটারি, শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব ও অন্যান্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
ঈদবস্ত্র পেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মরিয়ম জাহান তাহিরা বলেন, “আমি ২য় শ্রেণিতে পড়ি। নতুন জামা পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। ঈদের দিনে এটি পরে ঘুরবো। ভাইয়াদের অনেক ধন্যবাদ নতুন জামা দেওয়ার জন্য।”
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া রাজ বলেন, “ঈদের জামা হিসেবে আমি একটা শার্ট পেয়েছি, অনেক ভালো লাগছে। এই নতুন জামা পরে আমি দেশের বাড়ি যাবো। আমার দেশের বাড়ি পিরোজপুর।”
তরীর আরেক শিক্ষার্থী হাবিহা বুশরা বলেন, “আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। ঈদের জামা হিসেবে আমি একটা গেঞ্জি পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। এটি পরে ঈদের দিনে ঘুরবো, মায়ের সাথে নানার বাসায় যাবো।”
ঈদ উপহার বিতরণ কর্মসূচি সম্পর্কে তরী স্কুলের সভাপতি সাফায়েত মীর বলেন, “আমরা প্রতিবছর তরী স্কুলের শিশুদের নিয়ে ইফতার আয়োজন করে থাকি। এ বছর আমরা ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছি, তাই এই আয়োজন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবাই নতুন জামাকাপড় পরে। আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে আমাদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা তাদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করেছি। আমরা প্রায় ৮৫ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেছি।”
মিশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড রিলাইএবল চেঞ্জ (মার্চ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. একরাম উদ্দীন সুমন বলেন, “মার্চ দীর্ঘ এক দশক ধরে সমাজের অগ্রগতি ও নির্ভরযোগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘তরী’-এর শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ তারই একটি উদাহরণ। সামাজিক অগ্রগতি ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মাধ্যমে ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ‘মার্চ’ তার কাজের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ‘আলোর পথে আমরা’—এই স্লোগানকে ধারণ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ‘তরী স্কুল’ গঠিত হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল সাত-আটজন পথশিশুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণের হাতে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এই সংগঠনটিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা প্রায় একশ জন। Miassin For Advancement And Reliable Change (MARCH) সংগঠন থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘তরী’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি শিশুদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, শিক্ষা সফর, শিক্ষাসামগ্রী ও খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।