সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি: পরিবেশ উপদেষ্টা

New-Project-11-1.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত “নীতি থেকে বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ” শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি, তবে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে, যাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিরাপদ বিকল্প তৈরি করতে পারে।

তিনি বলেন, যতদিন না একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়, ততদিন ধাপে ধাপে এ থেকে সরে আসতে হবে।

পাশাপাশি, সরকার সব ধরণের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে—এমন গুজবকে “ভিত্তিহীন মিথ্যা” বলে উড়িয়ে দেন এবং এটিকে প্লাস্টিক শিল্পের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ তৈরির চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন।

প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য হারিয়ে যায় না, বরং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা মাছের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এটি এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তি, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবারই দায়িত্ব রয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সহজলভ্য বিকল্প রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। পুরান ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক কারখানাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি ধাপে ধাপে বন্ধ করার পরিকল্পনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার—নিষিদ্ধকরণ একমাত্র সমাধান নয়, বরং ধাপে ধাপে ব্যবহার বন্ধ করা, পুনর্ব্যবহার ও পুনর্ব্যবস্থাপনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ড সরকার অত্যাধুনিক পুনর্ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনে আমাদের সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং আমরা শিগগিরই তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।

তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, ২০৩০ সালের আগেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে একটি সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।

একইসঙ্গে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অবৈধ পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতি প্রতিরোধ অগ্রহণযোগ্য।

তিনি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা যদি একযোগে কাজ করি, তবে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন, ইউনিডো-ভিয়েনা, অস্ট্রিয়ার সার্কুলার ও রিসোর্স এফিসিয়েন্সি ইউনিট প্রধান জেরোম স্টুকি, এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা প্লাস্টিক দূষণ ও সামুদ্রিক আবর্জনা হ্রাসে কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।

Leave a Reply

scroll to top