শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রহনপুরের ঈদবাজার

New-Project-4-15.jpg

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রহনপুরের ঈদবাজার

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রহনপুরে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তে ঈদের বাজার। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থই খুশি, আনন্দ ও উৎসবের আয়োজন। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান দুটি উৎসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঈদুল ফিতর। “ঈদ” অর্থ উৎসব বা আনন্দ। “ফিতর” অর্থ বিদীর্ণ করা, উপবাস ভঙ্গ করা, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া।

ঈদের দিনটাকে সুন্দর করার জন্য আয়োজন শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। ঈদকে উপলক্ষ করে শুরু হয় কেনাকাটা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকেই প্রচণ্ড গরম আর রোদ উপেক্ষা করে মার্কেটমুখী ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে। ঈদ কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই তাদের বাড়তি বিক্রির আশা থাকে। এবারও তেমনটিই আশা করছেন তারা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার জুতাসহ ঈদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। এর পেছনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন অনেকেই।

উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হালকা-পাতলা ও গরমে আরামদায়ক পোশাকের দিকে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। মাঝারি দামের পোশাকের চাহিদা বেশি। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রহনপুর সহ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলো। পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্রেতারা মার্কেটে এসে পছন্দের পোষাক কিনে ঘরে ফিরছেন। ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানিদেরও ব্যস্ততার শেষ নেই। কোনো কোনো দোকানে এমন ভিড় যে পোষাকের দাম পরিশোধ করার জন্য ক্রেতাদের লাইন ধরে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বহনপুরের বিভিন্ন কাপড়ের দোকান, জুতার স্যান্ডেলের দোকান, কসমেটিক্স এর দোকান ও খাবারের দোকানে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘ এক মাসের প্রতীক্ষা শেষে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে ও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে অভিভাবকরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি রহনপুর বড়বাজার, স্টেশন বাজার, কলেজ মোড় সহ গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে মানুষজন ভিড় করছে। শুধু পোশাক নয়, ঈদ বাজারে জুতা ও স্যান্ডেলের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে স্টেশন বাজার রোডে নাদিম সু-প্যালেস, সুগার্ডেনে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

রহানপুর স্টেশন বাজারে নাদিম সু-কালেকশন এর উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ নাদিম হোসেন জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নতমানের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি করা হচ্ছে এবং প্রতিদিন সকাল ৯টা শুরু হয়ে রাত্রি ১২ টা পর্যন্ত কেনাবেচা চলছে। বিশেষ করে ক্রেতাদের চাইনা ও ইন্ডিয়া জুতা সেন্ডেলের উপর আগ্রহ বেশি। দাম যেমন হোক পছন্দ হলেই ক্রেতারা ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যবসা ভালই হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, এ রমজানের শেষের দিকে বেচা-কেনা আরো ভালো হবে।

 

রহনপুরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বিজয় চক্রবর্তী জানান, সকাল থেকে গভীর রাত অবধি দোকান খুলে রাখতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ঈদের বাজার করতে রহনপুর স্টেশন বাজারে ছুটে আসছেন। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে। এ ব্যবসায়ী আরো বলেন, বরাবরের মতো ছেলেদের তুলনায় মেয়ে ক্রেতা বেশি। এবার ঈদকে সামনে রেখে মেয়েদের কালেকশনও অনেক বেশি। এছাড়াও ছেলেদের টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, হালকা গরমের পাঞ্জাবি, কাতুয়া সহ ভালো মানের পোশাক কালেকশনও আছে। এবারের ঈদে মেয়েদের নাইরা, আফগান, সারারা, গারারা, আলিয়া ভাট ও গ্রাউন্ড পোশাকের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ছেলেদের গেঞ্জি সেট, শার্ট ও প্যান্ট, পায়জামা পাঞ্জাবি, কাতুয়া ও জিন্স প্যান্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে সব আশঙ্কা দূর করে ঈদ পর্যন্ত ভালো ব্যবসা করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।

 

রহনপুর স্টেশন বাজারের মহানন্দা কসমেটিকসের উত্তরাধিকারী রুহুল আমিন জানান, এবার ঈদে পছন্দসই কসমেটিক্সস কেনার জন্য দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বেচাকেনার সময় বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিনের প্রথম ভাগে বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে। তারপরও আশা করছি শেষের দিকে ব্যবসা ভালোই হবে।

 

পবিত্র রমজানে রোজাদারদের কাছে আকর্ষণীয় হলো ইফতার। বাহারি রঙের ইফতার সাজিয়ে রহনপুরের বিভিন্ন হোটেলগুলো ভালোই ব্যবসা করছে। এছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে রাস্তার দুই ধারে ভ্রাম্যমান দোকান করে জিলাপি, পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা, তরমুজ, আপেল, কমলা, পেয়ারা, কলা সহ বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। একেতো ঈদের বাজার তারপরে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে রোজাদারদের ইফতার সামগ্রি ক্রয় সব মিলিয়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে রহনপুরের বিভিন্ন জায়গায়।

 

রহনপুরের হোটেল ব্যবসায়ী মহানন্দা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক আব্বাস আলী জানান, পবিত্র রমজানে ইফতার সামগ্রীর মূল্য কিছুটা কম হলেও কেনা-বেচার অবস্থা গতবারের তুলনায় কম। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, মানুষের আর্থিক অবস্থার কারণে মনে হয় এ অবস্থা। ঈদ উপলক্ষে মিষ্টি ক্রয় করতে‌ ইতিমধ্যে গ্রাহকগণ দোকানে ছুটে আসছেন। ইনশাল্লাহ রমজানের শেষের দিকে ব্যবসা ভালো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন টেইলার্সের দর্জিরা। ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, মেয়েদের সালোয়ার কামিজ সহ বিভিন্ন কাপড় প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন টেইলার্সে কর্মরত দর্জিরা। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে রাত্রি ১টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এ ব্যস্ততা ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রহনপুর স্টেশন বাজারে ওরিয়েন্টে টেইলার্সের মালিক বেলাল উদ্দীন জানান, বর্তমানে তৈরি পোশাকের যুগেও গ্রাহকগণ সেলাই করা পোশাকের প্রতি তাদের আগ্রহ ও আস্হা রাখছেন। আমরা তাদের কাঙ্খিত পোশাকটি তৈরি করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। দোকানে আমার ৬ জন কর্মচারীকে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ঈদের সময় যেন গ্রাহকদের হাতে তাদের তৈরি করা পোশাকটি তুলে দিতে পারি এই আশায়।

 

রহনপুর স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি নাজমুল হুদা খান রুবেল জানান, প্রথমবারের মত এবারো রহনপুর স্টেশন বাজারকে অলোক সজ্জায় সুসজ্জিত করা হয়েছে মার্কেট মুখী ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। সেই সাথে ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সমস্ত স্টেশন বাজারকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বিধায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা নির্বিঘ্নে বাজার করে স্বাচ্ছন্দে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

 

তিনি আরও জানান, ঈদের বাজারে কচিকাচা বাচ্চাদের একটু বিনোদন দেয়ার জন্য মিকি মাউস (কার্টুনের) ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা দেখে বাচ্চারা অনেক আনন্দিত হচ্ছে। ঈদের বাজারে রহনপুর স্টেশন মার্কেটে ক্রেতাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য রাস্তার দুই প্রান্তে দুইজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ মার্কেটে গভীর রাত অবধি ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন পন‌্যের উপর ছাড়ের সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

অপরদিকে ঈদকে সামনে রেখে মাংস এবং মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, পোল্ট্রি মুরগি ২০০ থেকে ২২০ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি ও মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ক্রেতাদের কিনতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইস উদ্দিন জানান, বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা যথেষ্ট ভালো আছে পুলিশ পোশাক ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে টহলরত অবস্থায় আছে তা ছাড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট গুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। যেন ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্য ঈদের পোশাক ক্রয় করে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

scroll to top