শরীয়তপুরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ইঁদুরের খামার গড়ে হতে চান সফল নারী উদ্যোক্তা

New-Project-2025-03-18T134022.743.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

শরীয়তপুর পৌর শহরের বালুচরা এলাকার  লাবণী আক্তার খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স করেছেন। পড়াশোনা শেষে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে যখন চাকরি করার কথা ভাবতে থাকেন, তখন আর সময় ও সুযোগ  সুবিধা করতে পারেননি। প্রাণিবিদ্যায় পড়াশোনা করা লাবণীর মাথায় একসময় ইঁদুর লালন-পালনের ভাবনা আসে।

গত বছর জুন মাসে ঢাকার কাঁটাবন থেকে সুইচ অ্যালবিনো জাতের দুই জোড়া ইঁদুর কিনে আনেন বাড়িতে। একটি ছোট খাঁচায় তা লালন-পালন করতে থাকেন। ২০ দিনের মাথায় দুই জোড়া ইঁদুর ১৮টি বাচ্চা দেয়।

ব্যতিক্রমী বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার ব্যাপারে লাবণী আক্তার বলেন, ‘আমি যখন পড়ালেখা করেছি, তখন আমাদের ল্যাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হতো ইঁদুর। বেকার জীবন নিয়ে বোর ফিল (বিরক্ত বোধ) করছিলাম। হঠাৎ একদিন মাথায় আসে ইঁদুরের কথা। তখন ঢাকা থেকে দুই জোড়া ইঁদুর সংগ্রহ করি। যখন অল্প সময়ে ইঁদুরগুলো অনেকগুলো বাচ্চা দেয় এবং এগুলো লালন-পালনে ব্যয় ও সময় কম লাগে, তখন বড় পরিসরে লালন-পালনের পরিকল্পনা করি। আট মাসেই বুঝে গেছি, ইঁদুরের লালন-পালন করে ভালো আয় করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে ইঁদুরের ব্যাপক চাহিদা। তাই পরিকল্পনা করছি বড় আকারে খামার গড়ে তুলব।’

লাবণী জানালেন, বর্তমানে তাঁর খামারে বাচ্চা দেওয়ার মতো ইঁদুর আছে ৮০টি। আর বিক্রি করার মতো ইঁদুর আছে ২৮০টি। দুই থেকে আড়াই মাস বয়স হলেই ইঁদুর বাচ্চা দেয়। একটি মা ইঁদুর একসঙ্গে ১০ থেকে ২০টি বাচ্চা দেয়। প্রতি এক মাস পরপর ইঁদুর বাচ্চা দেয়। প্রতি এক মাস পরপর ৮০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম ওজন হলেই ইঁদুর বিক্রি করা শুরু করেন। এই ওজন ও বয়সের একেকটি ইঁদুর ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়।

 

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন, গণমাধ্যমকে  বলেন, লাবনীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। “নারীরা তখনই সংসার ও কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, যখন তাদের পরিবার থেকে সহযোগিতা করা হয়। লাবনীর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে যেভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনন্য।” আমিও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও আমার পরিবারের সহযোগিতার জন্য সংসার ও কর্মক্ষেত্র সমানভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সব ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। লাবনী যদি আমাদের কাছে আসে, আমরা তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করব, বলেন ইউএনও ইলোরা ইয়াসমিন।

প্রতিদিন সকালে ইঁদুরগুলোকে ধান, গম ও ভুট্টা মিশ্রিত খাবার দেওয়া হয় বলে জানান লাবণী আক্তার। একেকটি ইঁদুরের জন্ম থেকে বিক্রির আগ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ টাকার খাবার ও ওষুধ লাগে।

লাবণী নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ইঁদুর বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত ৩৫০টি ইঁদুর বিক্রি করেছেন। ওই ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল আকাশ গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিকেল কলেজে, গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে ও ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির ল্যাবে ইঁদুর প্রয়োজন হয়। তিনি সেসব জায়গায় ইঁদুর সরবরাহ করেন।

Leave a Reply

scroll to top