বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কাতারকে চাপ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটে একমাত্র সমাধান হচ্ছে টেকসই প্রত্যাবাসন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দোহায় কাতার ফাউন্ডেশন আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ অবস্থান বাংলাদেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ এবং এটি রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তুলেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে হতাশার স্পষ্ট লক্ষণ। এ সমস্যা আরও অব্যাহত থাকলে তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং উন্নয়ন উদ্যোগকে বিপণ্ন করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা সংকট থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে (রোহিঙ্গা) আশ্রয় দিয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে। বাংলাদেশ মনে করে, এ সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে টেকসই প্রত্যাবাসন।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, আমরা নিশ্চিত করি যে, আজকের আলোচনা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ না হয়, বরং একটি অর্থবহ অংশীদারত্বের সূচনা হয়, যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের অভিন্ন মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর অগ্রভাগে রাখবে এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। আসুন, আমরা মানবতার জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য একসাথে কাজ করি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সহায়তা তহবিল কমিয়েছে, যা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে। বাংলাদেশ মনে করে চলমান সংকটের একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নিউইয়র্কে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে উচ্চ পর্যায়ের একটি সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে, সেখানে কাতারকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, জাতিগত নিধন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় কোনভাবেই শাস্তির বাইরে থাকতে পারে না, এজন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে চলমান প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে বাংলাদেশ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের বিচার হতে পারে রাখাইনে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের আস্থা।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিমি এবং রাখাইনের ১৭টির মধ্যে ১৪টি টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণ করছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির তথ্যানুযায়ী, রাখাইনে মোট অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১ জন রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা দীর্ঘমেয়াদে ২১টি ক্যাম্প ও তিনটি গ্রামে বসবাস করছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুত ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৫ জন (অধিকাংশ রাখাইন) ১ হাজার ২১৯টি স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।