হিমালয়ের কোল ঘেঁষা উত্তরের জনপদ রংপুরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সকাল থেকে সন্ধ্যাঅবধী শীতের সঙ্গে বইছে কনকনে বাতাস। এতে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। তাপমাত্রা দিন দিন কমছে, সেইসঙ্গে কমছে সূর্যের প্রখরতাও এতে করে বাড়ছে জনজীবনে দুর্ভোগ। সন্ধ্যার পর গা শিহরে ওঠা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। রাত যত গভীর হচ্ছে, ততই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে প্রকৃতি। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনাও। শীতের কারণে অসুস্থ রোগীর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বাড়ছে। আর স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।
হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলো। তাই এই জেলাগুলোতে যেমন শীত আসে একটু আগেভাগেই; তেমনি শীতের তীব্রতাও চরম পর্যায়ে পৌঁছে। গেল শীতের মতো এবারও শীত যেনো আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে শ্রমজীবী মানুষদের মাঝে। কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয় ও গরিব-অসহায় মানুষ।
এদিকে হঠাৎ করে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষ। খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন দুঃস্থরা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে অনেকেই বের হচ্ছেন বাইরে কাজের সন্ধানে। তবে আগামী কয়েক দিন থেকে ঘন কুয়াশা আর শীতের তীব্রতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোসাফিজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক সেলসিয়াস। যা এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর রংপুর জেলায় ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে পারে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। এ কারণে উড়োজাহাজ, নৌ পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সমস্যা হতে পারে।
রংপুর শহরতলীর মডার্ণ মোড়ের রিকশাচালক আশরাফুল আলম বলেন, যত দিন যাচ্ছে রংপুরে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দু দিন ধরে বেলা ৯টা থেকে ১০টার আগে সূর্যের দেখা মেলানি। ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। রাস্তা-ঘাট একেবারে ফাঁকা, মানুষজন নেই।
আশঙ্কা প্রকাশ করে আশরাফুল বলেন, কয়েকদিন পর থেকে আরও কনকনে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। তখন আয়-রোজগার সব বন্ধ হয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিপদে পড়বো।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুটি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে অবতরণ করতে পারেনি। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এ কে এম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৮টায় বেসরকারি বিমান দুটি সংস্থা দুটি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের কথা থাকলেও নামতে পারেনি। রানওয়েতে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে দুই হাজার মিটার ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) থাকতে হয়। বর্তমানে ১২০০ মিটার দৃষ্টিসীমা বিরাজ করছে। আকাশ পরিষ্কার হলে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শীতের এ সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় এমনটি ঘটে।
এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রংপুরের তারাগঞ্জে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষের ঘটনায় চালকসহ অন্তত ১০ জন আহতের সংবাদ জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাকার পুল এলাকায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে দিনাজপুর গ্রামে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এ সময় রংপুরগামী একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকচালকসহ ১০ জন আহত হয়। স্থানীয় ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় বিগোয়ান্তক ঘটনা ঘটে অহরত।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই জেলায়ও ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের আউটডোরে আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, এবার শীতের প্রকোপ নভেম্বর মাসেই বাড়তে শুরু করেছে। শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। বয়স্ক নারী-পুরুষরাও শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।