যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। যান্ত্রিক এই শহরে জীবনের নানা তাগিদে প্রতিনিয়তই মানুষ ছুটছে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কিন্তু ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই যানজট যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত যানজট হলে মানুষ কাজে বের হবে কীভাবে? একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কর্মঘন্টা অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে কর্মদক্ষতা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও যানজট না কমায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হন অনেকেই।
২০১৮ সালে ৩ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় বিআরটিসির দুই বাসের রেসারেসিতে রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত আটকে থাকার ছবি যেমন দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছিল, ঠিক একই বছরের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। এই দুই ঘটনায় রাজপথে উত্তাল হয়ে উঠে নিরাপদ সড়কের জন্য। সেসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নামে একটি আইন পাশ করে। তবে সে আইন শুধু পাশেই সীমাবদ্ধ ছিল, বাস্তবায়ন হয়নি এখনো।
গেলো ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন মাস পার হয়ে গেলেও জনমনে একটা প্রশ্ন উঠছে, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা কেনো ফিরছে না।
একদিকে নগরীতে ট্রাফিক পুলিশ কম থাকায় যান চলাচলের যেন বালাই নাই। ইচ্ছেমত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, রাস্তায় দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, সেই সাথে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি মেরামতের দোকানগুলো হয়ে উঠেছে নগরবাসীর পথের কাট। মানুষের এসব উদাসীনতায় বিশেষ করে ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারা, বাংলামটর, তেজগাঁওসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা যায় চরম আকারে। যানজটের কারণে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যানজট শুধু আমাদের মূল্যবান সময়ই কেড়ে নিচ্ছে না বরং নাগরিক জীবনেও ডেকে আনছে নানা দুর্ভোগ।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পরিবহন সেক্টর চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিলেও সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় আসলে তেমন কোন পরিবর্তনই আসে নাই।
ট্রাফিক বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযান চালাচ্ছে, জরিমানা করছে তবে মানুষ যদি নিজের থেকে সচেতন না হয় তাহলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু অবৈধ যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নেই বললেই চলে।
সাধারন মানুষ একটাই দাবী এই অন্তবর্তী সরকারের কাছে, ট্রাফিক ব্যবস্থার সংস্কার অতিদ্রুত করতে হবে, তা না হলে এই দেশ পিছিয়ে পড়বে।