যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বেড়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ

New-Project-2025-03-24T134055.004.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত বছরের তুলনায় এবার  বড়দের পাশাপাশি শিশু যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যাও  বেড়েছে। কিন্তু কমেছে বরাদ্দ, রোগ নির্ণয়ের সুযোগ, ওষুধের প্রাপ্যতা, চিকিৎসা ও সেবার পরিধি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস।

প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ (সোমবার) দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্যে ডব্লিউএইচও যক্ষ্মা প্রতিরোধে টেকসই প্রতিশ্রুতি, আর্থিক বিনিয়োগ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং যত্নের ওপর জোর দিয়েছে। সংস্থাটি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক তহবিল হ্রাস পাওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা কর্মসূচিতে গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন কমায় বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রোগটি নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরিচালিত এসএটিভি, এফএইচআই ৩৬০ পরিচালিত টিবি-ডিএনএস প্রকল্প দুটি বন্ধ হয়ে গেছে।

এসব তহবিলে পরিচালিত হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জেলায় সেবা প্রদানের কক্ষগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যক্ষ্মা শনাক্ত ও চিকিৎসায় সম্পৃক্ত জনবলের প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে গেছে।

অনেক কনসালট্যান্ট কর্মহীন হয়ে পড়ায় রোগীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাম্বুলেটরি ডিজিটাল এক্স-রে সেবাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। এমনকি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্স (এমডিআর) টিবি রোগীদের সেবাও বন্ধের পথে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে এনটিপি নামে একটি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো; কিন্তু বর্তমান সরকার সেটিও বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ আছে—এমন প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৮৫ হাজার ৬০৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ হাজার ৩০৯, রাজশাহীতে ৩৫ হাজার ৮১৯, রংপুরে ৩৪ হাজার ৮৩৩, খুলনায় ৩৪ হাজার ১৪, বরিশালে ১৯ হাজার ৬০০, সিলেটে ২২ হাজার ২২ এবং ময়মনসিংহে ২১ হাজার ৪১৯ জন। এ ছাড়া টেকনাফ, উখিয়া ও ভাষানচর এলাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষ্মা কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়। গত বছরে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২ হাজার ৭৫০ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে।

শিশু যক্ষ্মা রোগীদের শনাক্ত বাড়াতে ২০২৩ সাল থেকে মলের জিনএক্সপার্ট চালু করা হয়। এর ফলে ২০২৪ সালে মোট শনাক্ত রোগীর ৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল শিশু যক্ষ্মা রোগী, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া নিয়মিত তার গতি প্রকৃতি পরিবর্তন করছে, বাড়াচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা। এমন পরিস্থিতি বিদেশি অর্থায়ন ও অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যক্ষ্মা নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

scroll to top