মিয়ানমার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৫ জন নিহত, হতাহত হাজার ছাড়িয়েছে

New-Project-2025-03-28T192807.894.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশটির সামরিক সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী,  ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, ভূগর্ভস্থ ১০ কিলোমিটার গভীরে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত কম্পন অনুভূত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ব্যাংকক থেকে কয়েকশ’ মাইল দূরে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ায় অন্তত ৭০ নির্মাণ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। মিয়ানমারে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে রাজধানী নেপিদোতে রাস্তায় ফাটলের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সামরিক সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ভূমিকম্পটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালয়ের কাছে আঘাত হেনেছে, যেখানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। ইউএসজিএস জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে।

এছাড়া, মান্দালয় অঞ্চলে শুক্রবারের জুমার নামাজের সময় শ্বে ফো শিং মসজিদ ধসে অন্তত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে খিত থিত মিডিয়া।

এক উদ্ধারকর্মী বলেন, আমরা নামাজ পড়ছিলাম, তখনই ভবনটি ধসে পড়ে। অন্তত তিনটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। অনেকে আটকা পড়েছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন মারা গেছেন, তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক মান্দালয় অঞ্চলের আভা সেতু ধসে পড়েছে এবং মান্দালয় প্রাসাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এমআরটিভি জানায়, সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, উত্তর-পূর্ব শান রাজ্য, নেপিদো কাউন্সিল এলাকা এবং বাগো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডও ব্যাংকককে ‘জরুরি এলাকা’ ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছে থাই পিবিএস নিউজ। ভূমিকম্পের কারণে থাইল্যান্ডের স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই এনকোয়ারার।
মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা সোয়ে লুইন জানান, প্রথম ভূমিকম্পটি দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আরও আফটারশকের আশঙ্কায় আতঙ্কিত।
বিবিসি সাংবাদিক বুই থু ব্যাংককে বসবাস করেন। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজডে প্রোগ্রামকে জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাসায় রান্না করছিলেন। তিনি বলেন, আমি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ব্যাংককের ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল নয়, তাই আমি মনে করি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পের প্রভাবে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের কিছু মেট্রো ও লাইট রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকককে দুর্যোগ এলাকা ঘোষণা করেছে শহরের কর্তৃপক্ষ।
চীনের ইউনান প্রদেশেও ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে। দেশটির ভূমিকম্প সংস্থা জানিয়েছে, সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯।

ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট লাইন বরাবর ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী বাগানে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিনজন নিহত হয়েছিলেন এবং পর্যটন স্পটের মন্দিরের দেয়াল ও চূড়াগুলো ধসে পড়েছিল।

দরিদ্র এই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, খুবই দুর্বল। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা চললেও ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

scroll to top