রাজধানীর আজিমপুরে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসায় ডাকাতির সময় আট মাসের শিশুকে অপহরণ করে ডাকাত দল। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শিশুটিকে উদ্ধার করেছে র্যাব। মুক্তিপণের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। এ ঘটনায় পাঁচজন জড়িত বলে জানান তিনি।
অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব বলছে, অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে ওই বাসাটি রেকি করে অপহরণকারীরা। এরপর সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া নেয় ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। বাসা ভাড়া নেওয়ার একদিন পরেই শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে অপহরণ করে তারা। অপহরণের পর মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হওয়ায় মুক্তিপণ দাবি করেনি অপহরণ চক্রটি।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, মুক্তিপণের উদ্যাশে আটমাস বয়সী শিশু জাইফাকে অপহরণ করা হয়েছিল। আজিমপুরে বাসায় ডাকাতি ও শিশু অপহরণের ঘটনায় শাপলার সঙ্গে সুমন, রায়হান ও হাসান নামে আরও তিন সহযোগী ছিলেন। তাদের টার্গেট ছিল শিশু জাইফার বিনিময়ে তার মার কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা হবে। তবে ঘটনার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করার তারা আত্মগোপনে থাকেন।
র্যাব জানায়, শিশুটির মা ফারজানা আক্তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত। তার বাবা আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ল্যাব সহকারী হিসাবে চাকরি করছেন। প্রাতরক শাপলা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শিশুটির মা ফারজানাকে টার্গেট করে। তিনি বাসে অফিসে যাতায়াতকালে অপহরণকারী শাপলা নানা কৌশলে শিশুর মায়ের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে শাপলার অসহায়ত্ব কথা বলে শিশুর মায়ের সঙ্গে সাবলেটে একই বাড়ি থাকার পরিকল্পনাও করেন। এক সপ্তাহ আগে ফারজানার বাসায় এসেছিলেন শাপলা। পরে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে আজিমপুরে ফারজানার বাড়িতে একটি রুম সাবলেটে ভাড়া উঠেন অপহরনকারী ফাতেমা আক্তার শাপলা। ওইদিন রাতে কৌশলে ভুক্তভোগীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরদিন (শুক্রবার) সকালে শাপলার আরও তিনজন সহযোগী ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে থাকা নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। এরপর শিশু মেয়ে আরিশা জান্নাতকে অপহরণ নিয়ে নবীনগর হাউজিং এলাকায় চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে , শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়ার আগে তার মায়ের হাত পা বেঁধে মুখে কাপড় গুজে দেয়া হয়েছিলো। এরপর মা ও শিশু- উভয়ের মুখেই ‘স্প্রে’ করে দেয়া হয়েছিলো অজ্ঞান করার জন্য।
এক প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শিশু অপহরণের ঘটনায় তার বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রেখেছে র্যাব। শিশু বাবা-মার মধ্যে সাংসারিক ভাবে মনমালিন্য ছিল। তাই তারা আলাদা থাকতো। তবে শিশুর বাবার আজিমপুরে বাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। দিনে শিশুর সঙ্গে থেকে রাতে তিনি অন্যত্রে চলে যেতেন। এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা পুলিশ ক্ষতিয়ে দেখছে।
র্যাব জানায়, অপহরনকারী শাপলার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত লালমাটিয়া মহিলা কলেজে পড়াশোনা করলেও তা শেষ করেননি। মা-বোনের সঙ্গে থাকতেন আদাবর নবীনগর হাউজিংয়ে।