স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা রোববার(৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে মানব পাচার সংক্রান্ত বিমসটেক (The Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation) সাব-গ্রুপের তৃতীয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহি করার জন্য শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সজাগ ও সক্রিয় রয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং পাচারের বিপদ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করার করার জন্য বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং মানব পাচার সংক্রান্ত বিমসটেক সাব-গ্রুপের তৃতীয় সভার চেয়ারম্যান খন্দকার মোঃ মাহাবুবুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিমসটেক সেক্রেটারিয়েট ঢাকার পরিচালক প্রশান্থ চান্দ্রান (Prasanth Chandran)।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মানব পাচার মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, মানব পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের দক্ষতার সাথে শনাক্তকরণ, তাদের চাহিদা মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত পরিষেবা প্রদানকারীদের সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় রেফারেল ব্যবস্থা (ওয়েব প্ল্যাটফর্মে হোস্ট করা)-সহ সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, মানব পাচারকারীদের বিচার দ্রুত করার জন্য নিবেদিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং আমাদের জাতীয় কৌশলে সচেতনতামূলক প্রচারণাগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপরন্তু, আমরা বিমসটেক এবং অন্যান্য দেশের সাথে এ বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য আমাদের পারস্পরিক আইনি সহায়তা ব্যবস্থাকে প্রসারিত করেছি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যান্য বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ বৈঠকে সেই পদক্ষেপ এবং অভিজ্ঞতাসমূহ বিনিময় করা হবে মর্মে আমি আশা করি। তিনি বলেন, পাচারকারীরা সরকারী উদ্যোগগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত নিত্য নতুন কৌশল গ্রহণ করে।
তারা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সংকট ও দারিদ্র্যকে কাজে লাগিয়ে ও প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গোপন কার্যকলাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য অভিবাসন রুটগুলোকে কাজে লাগাতে থাকে। এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি সম্মিলিত এবং কৌশলগত কর্মপদ্ধতি প্রয়োজন এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য ও সেরা অনুশীলন বিনিময়ের মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদানে বিমসটেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের পাচার বিরোধী কৌশলকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম করবে।
উপদেষ্টা আগামী দুই বছরের জন্য BIMSTEC (বিমসটেক)-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বাংলাদেশকে অর্পণ করার জন্য এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্ভুক্তিমূলক, কর্মমুখী এবং দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিমসটেক-কে পরিচালনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর সক্ষম এবং অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বিমসটেক আমাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সম্পর্ক গভীরতর করার মাধ্যমে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এ বৈঠক মানব পাচার কৌশল নিয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিমসটেক অঞ্চল জুড়ে মানব পাচার রোধে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, এ বৈঠকের ফলাফল শক্তিশালী নীতি তৈরি, এর কার্যকর প্রয়োগ এবং গভীর আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
সভায় বিমসটেকভুক্ত সাত সদস্য দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান) মানব পাচার সংক্রান্ত সাব-গ্রপের সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন।