পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, বেলুচিস্তান কখনোই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না এবং এটি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে থাকবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন বা ইসলামাবাদের ভাষায় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা’র জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। তিনি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারতের ‘ক্রীতদাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) আর্থিক সহায়তা সম্পূর্ণভাবে ভারত থেকে আসে।
সোমবার রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তরে ‘হিলাল টকস’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মেজর জেনারেল চৌধুরী। পাকিস্তান সরকারের এই প্রকল্পের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের নৈতিক মান উন্নয়ন। সভায় তিনি বলেন, “বেলুচিস্তানে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারা কেবল ভারতের মদতপুষ্ট নয়, ভারতের ক্রীতদাস। বিএলএর পুরো আর্থিক ব্যয় ভারত বহন করে। তারা ভারত থেকে আগত ঝামেলা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। স্পষ্ট করে বললে, বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের অর্থে কেনা।”
তিনি আরও বলেন, “বিএলএকে সহায়তা দিয়ে ভারত শুধু পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। আমরা বিএলএ ও তাদের প্রভু ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই—বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অংশ এবং পাকিস্তানেরই থাকবে।” তিনি দাবি করেন, বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অর্থনীতি ও সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত এবং ভবিষ্যতে এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশে পরিণত হবে।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস
বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময় থেকে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বেলুচিস্তানে মাকরা, লাস বেলা, খারান ও কালাত নামে চারটি করদ রাজ্য ছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মাকরা, লাস বেলা ও খারান পাকিস্তানে যোগ দিলেও কালাতের রাজা আহমেদ ইয়ার খান বালোচ প্রথমে পাকিস্তানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলেও তার ভাই প্রিন্স আগা আবদুল করিম খান বালোচ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘটনা থেকেই বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা।
গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে বেলুচিস্তান ও ইসলামাবাদের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি, বরং পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হয়েছে। পাকিস্তান সরকার বালোচ লিবারেশন আর্মিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও বিএলএ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত এখন নিয়মিত ঘটনা। তবে স্বাধীনতা আন্দোলন এখনো সফলতা পায়নি। এর একটি বড় কারণ, বেলুচিস্তানের কিছু অংশ ইরান ও আফগানিস্তানের অধীনে রয়েছে। স্বাধীন বেলুচিস্তানের জন্য প্রতিবেশী এই দুই দেশের সমর্থন প্রয়োজন, যা বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ, পাকিস্তানের বেলুচরা স্বাধীনতা পেলে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচরাও স্বাধীন বেলুচিস্তানে যোগ দিতে চাইতে পারে। এছাড়া, বেলুচ আন্দোলন বর্তমানে বিভক্ত নেতৃত্ব ও তীব্র মতবিরোধের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার জন্য ভারতকে দায়ী করলেও এই অঞ্চলের জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ঐতিহাসিক পটভূমি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী এই অঞ্চলকে নিজেদের অংশ হিসেবে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
সূত্র: জিও টিভি