এক সময়ের বিনোদন জগতের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল সিনেমা। আর সেই সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যম সিনেমা হল। শুধু উৎসবে নয়, সারা বছর সিনেমা হলে যেতেন দর্শক। তখন দর্শকের চাপে টিকিটের সংকট দেখা যেত, সিনেমা হলের সামনে ঝুলত হাউজফুল লিখা সাইনবোর্ড। এসব শুধুই এখন অতীত,রূপকথার গল্পের মতো। বর্তমানে বিনদনের করুণ দশা। ভালো সিনেমার অভাবে বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল। মূলত শূন্য দশকের প্রথম দিক থেকেই সিনেমার ব্যবসায় ধস নামে। এরপর থেকে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হল।
চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে ৫৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা হল। সিনেমা নেই, লোকসানে আর হলটি চালাতে চাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মধুমিতার কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ গণমাধ্যমকে জানান, সবশেষ নভেম্বরে হলটিতে মুক্তি পেয়েছিল ‘দরদ’ সিনেমা। এরপর দুই মাস ধরে হলটি বন্ধ রয়েছে। কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। যার দরুণ এভাবে হল বন্ধ রেখে স্টাফদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আসছে ঈদে সিনেমা চালাবেন এরপর চিরতরে বন্ধ করে দেবেন দেশের ঐতিহ্যবাহী এই হলটি।
তিনি বলেন, দুই মাস ধরে হল বন্ধ রয়েছে। আর কোনোভাবে ত চালানো সম্ভব হচ্ছে না আমাদের পক্ষে। অন্তর্বর্তী সরকারও তো কিছু করছেন না। মাসের পর মাস লোকসান দিয়ে চালাচ্ছি। এভাবে তো চলতে পারে না। যার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৫৬ বছর ধরে সিনেমা চালাচ্ছি কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বন্ধ করেই দিতে হচ্ছে। রোজার ঈদে সিনেমা চালাব, কোরবানি ঈদেও চালাতে পারি এরপর একেবারে বন্ধ করে দিব।উৎসব ছাড়া তো সিনেমা চলে না, দর্শক আসে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি কোনো সিনেমাই চলছে না। শুধু সিঙ্গেল স্ক্রিনই নয়, মাল্টিপ্লেক্সেরও তো একই অবস্থা এখন। তাদেরও তো এখন কোনো সিনেমা সেভাবে চলছে না।
বন্ধ করে দেবার পর পরিকল্পনা কি, এমন প্রশ্নে মধুমিতার এই কর্ণধার বলেন, ‘এটা ভেঙ্গে এখানে কমার্শিয়াল বিল্ডিং করা হতে পারে। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে আমার তো ইচ্ছে আছে এখানে মাল্টিপ্লেক্স করার।’ ঢাকার অন্যতম প্রাচীন সিনেমাহল মধুমিতা। ১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর হলটি উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান।
প্রসঙ্গত, ঢাকার মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৪৪টি। এর মধ্যে বড় সিনেমা হলগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি চালু আছে। ২০১৯ সালে ‘ফিল্মপাড়া’খ্যাত কাকরাইলের রাজমণি সিনেমা হলটির বাতি নিভে গেছে। বর্তমানে সেখানে ২২তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর হাজার আসনের সিনেমা হল ‘অভিসার’ও বন্ধ হয়ে গেছে।ইতোমধ্যেই আরও বন্ধ হয়েছে গুলিস্তান, বিউটি, রূপমহল, নাজ, শাবিস্তান, মল্লিকা, পূরবী, স্টার, সুরমা, লায়ন, যমুনা, আগমন, ডায়না, জোনাকি, চিত্রামহল, অতিথি, মানসী, পূর্ণিমা, রাজমণি, পদ্মা, মুন।
এদিকে, বন্ধ হওয়ার পথে ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর পুরোনো ও স্বনামধন্য সিনেমা হল আজাদ। ঐতিহ্যের কঙ্কাল হয়ে এখনো সচল, তবে জীবনপ্রদীপ নিবুনিবু। ঢাকার প্রথম দিককার ১০টি সিনেমা হলের অন্যতম এটি।