ফেসবুক কমেন্টের জেরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক এক শিক্ষার্থীকে পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা ইকবালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন নোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদারের একটি ফেসবুক পোস্টে আপত্তিকর মন্তব্য করেন নাজমুল হুদা ইকবাল। তিনি লিখেন, “আরে … পুত শরীরের ওজন কমা, টাইম হয়ে গেছে, রেডি হয়ে যা।”
এই মন্তব্যের উত্তরে পাল্টা মন্তব্য করেন নোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। তিনি নাজমুলের বিরুদ্ধে গত সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিক্রির অভিযোগ তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল ফেসবুকের মন্তব্যের ঘরেই হুমকি দিতে শুরু করেন।
ইসমাইল হোসেন জানান, পরে তার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এতে নাজমুল ম্যাসেঞ্জারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দিতে থাকেন। ইনবক্সে ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়ে ইসমাইলকে মা-বাবার নাম ধরে গালি দেন এবং একপর্যায়ে তুলে নিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলার হুমকি দেন।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা ইকবাল বলেন, “আমি একটি নির্দিষ্ট দল করি। আমি আবু বাকের মজুমদারের ফেসবুক পোস্টে একটা কমেন্ট করেছিলাম। সেখানে ইসমাইল আমাকে বাজেভাবে কমেন্ট করে ও হুমকি দেয়। অথচ সে আমার ভাই না, কলিগ না, সমপর্যায়েরও না, বন্ধুও না। আগে চিনতামও না। পরে জানতে পারি, সে আমার বাড়ির পাশের ছোট ভাই। কমেন্ট বক্সে আমার ফোন নম্বর দিয়ে বলি— ‘কে রে তুই? সাহস থাকলে আমার নম্বরে ফোন দে।’ পরে আমি তাকে মেসেঞ্জারে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু সে রিসিভ করেনি এবং আমাকে ব্লক করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “পরে আমি তাকে বললাম— (অশ্লীল শব্দ), আমি তোকে চিনসি। এত বড় কমেন্ট করার পর তুই আমাকে ব্লক করলি? তোর পিঠের চামড়া আমি উঠায়া নিমু। আমি তাকে ফোন দিয়েছিলাম এটা জানতে চেয়ে, কেন সে এত বড় কমেন্ট করল, যখন এখানে আমার সঙ্গে তার কোনো কথাই হয়নি।”
তার বিরুদ্ধে আইনিভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “আইনি ব্যবস্থা নেব এত ভালো মানুষ আমি না। সে আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া শুরু করেছে। সে বলেছে, আমি নাকি দুর্নীতি করেছি। তাই আমি তাকে বলেছি, আমি তার পিঠের চামড়া তুলে নেব। সে আমার ফেসবুক পোস্টগুলো বিভিন্ন জায়গায় খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করছে, যার স্ক্রিনশট আমার কাছে আছে।”
মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে নাজমুল বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা নই। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিক্রি করতে পারে না।”
নোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালে নাজমুল ফ্যাসিবাদী শক্তি ব্যবহার করে এলাকায় বহু অনৈতিক কাজ করেছেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে অনেক অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করেছেন— এমন প্রমাণ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পদ ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পেশিশক্তি কাজে লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিক্রি, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হয়রানি করতেন। আমি এখন আতঙ্কে আছি।