মরতে হলে তো প্রথমে বাঁচতে হবে। বাঁচার অধিকার নিশ্চিত হওয়ার পরই মরার বিষয় সামনে আসবে। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যেসব মানুষ বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ফর্মূলা চলে না। সেখানকার নাগরিকদের বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। ইসরায়েল এর বর্বরোচিত হামলায় মৃত্যুই সেখানকার নাগরিকদের একমাত্র প্রাপ্তি।
রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে জেগে যখন আমরা অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে চোখ রাখি তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘গাজায় হামলায়…নিহত। প্রতিদিনিই ইসরায়েল অসভ্যতা ও বর্বরতা চালাচ্ছে। আর মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ১০ এপ্রিল সকালে এ সম্পাদকীয়টি যখন লিখতে বসেছি তখনও দেশের সেরা অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর লীড নিউজ এর শিরোনাম ছিলো ‘গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েল এর হামলায় নিহত ৩৫।’ অর্থ্যাৎ মানুষের জীবনের সিকি পরিমাণও মূল্য নেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েল এর কাছে।
মূলত ইসরায়েল গাজা উপত্যকাবাসীকে বাঁচতেই দিচ্ছে না। সেখানকার হাজার হাজার শিশুকেও তারা হত্যা করছে, যেন কোনো প্রজন্মই বেঁচে থাকতে না পারে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি হামলায় পিতা হারিয়ে এতিম হয়েছেন অন্তত ৩৯ হাজার শিশু। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ হাজার। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার একান্ন শতাংশই শিশু। নতুন প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে না পারে এজন্য ইসরায়েল শিশুদেরও টার্গেট করে হত্যা করছে। ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২শ’ ৭৪ জন নবজাতককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আর এক বছরের কম বয়সী ৮শ’ ৭৪ জন শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সন্ত্রাসীরা।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে স্থল ও বিমান হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার নাগরিক। ধ্বংস করা হয়েছে সরকারি বেসরকারি শত শত স্থাপনা। বেসামরিক স্থাপনায়ও নির্বচারে হামলা করছে ইসরায়েল। হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্সেও হামলা চালাচ্ছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। বাদ পড়ছেন না সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম। ইসরায়েল এই হামলায় অসংখ্যা সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।
যুদ্ধি বিরতি চুক্তি এবং মানবাধিক লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পরও নিশ্চুপ রয়েছে বিশ্বমুসলিম নেতারা। বিশেষ করে আরব বিশ্ব একেবারেই চুপ রয়েছে। অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রশ্ন বিশ্ব মুসলিম নেতাদের কানে কী আমাদের আত্মচিৎকার পৌঁছায় না?