পুলিশ কমিশন গঠন ও দেশ-বিদেশের মহলে র্যাবের কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে বিলুপ্তের সুপারিশ করেছে বিএনপি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিটি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা তুলে ধরেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে – চার ধাপের পরিবর্তে দুই স্তরে পরীক্ষায় পুলিশ নিয়োগ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং, পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ, সপ্তাহে একদিন পূর্ণদিবসসহ পাঁচ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
এছাড়া, দুর্নীতিগ্রস্হ ৪৮৮জন পুলিশ সদস্যকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেন তিনি। মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন- অন্তবর্তীকালীন সরকার সুপারিশ আমলে না নিলেও বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করবে। বিএনপি পুলিশকে নিরপেক্ষ বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুপারিশে বিএনপি বলছে স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশকে অপরাধ দমনে সহায়তা দেওয়া, জনসাধারণ-পুলিশ সম্পর্ক উন্নয়নে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রত্যেক উপজেলা-থানায় একটি নাগরিক কমিটি গঠনের কথা বলেন। স্থানীয় গণ্যমান্য, সুশিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। কমিটির সভাপতি হবেন একজন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। সদস্য সচিব হবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া দুইজন ইউপি সদস্য, একজন শিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী, একজন পেশ ইমাম এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে দুই বছর সময়কালের জন্য এই নাগরিক কমিটি গঠন করবেন।
সুপারিশে বিএনপি আরও বলছে, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় থাকা র্যাব ইতোমধ্যে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সুধীজন র্যাবকে দেশে সংঘটিত অধিকাংশ গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের জন্য দায়ী করেছে। বাহিনীটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে র্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হলো। র্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা পুলিশ যেন পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কমিউনিটি পুলিশিংয়ে জোর দিয়েছে বিএনপি। তারা বলছে, এর মাধ্যমে সমাজে বিবিধ অপরাধ প্রবণতা এবং সামাজিক অস্থিরতা কমবে, পুলিশ-জনসাধারণের মধ্যে দূরত্ব কমবে, জনসচেতনতা বাড়বে এবং আইনের শাসন জোরালো হবে। এই উদ্দেশ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে এবং শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন কমিউনিটি পুলিশ কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক পদের নিচে নয়) নিয়োজিত হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তার একটি অস্থায়ী দপ্তর থাকবে।