“পাগলা মসজিদের” দান সিন্দুকে মিলল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

New-Project-2-8.jpg

"পাগলা মসজিদের" দান সিন্দুকে মিলল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খুলে এবার রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সিন্দুকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ও চিরকুট মিলেছে। শনিবার দিনভর গণনা শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেসমিন আক্তার ২৪ ঘন্টা বাংলাদেশ কে বলেন, এবার ১১টি সিন্দুক খুলে মোট ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। দিনভর গণনার পর রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার এর উপরে টাকা পাওয়া গেছে। গতবারের তুলনায় এবার টাকা এক বস্তা কম থাকলেও বড় নোট থাকায় টাকা বেশি পাওয়া গেছে।

এর আগে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর সর্বশেষ পাগলা মসজিদের সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৯ বস্তায় রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবার টাকা এক বস্তা কম হলেও টাকার পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা বেড়েছে।

শহরের নরসুন্দা নদীর পাড়ে এই মসজিদের দানসিন্দুকগুলো প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর অন্তর খোলা হয়। ৪ মাস ১২ দিন পর আজ সকাল ৭ টায় জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো সিন্দুক থেকে বের করে বস্তায় ভরা হয়।

 

পাগলা মসজিদের ১১ সিন্দুকে ২৮ বস্তা টাকা, সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা সিন্দুক খোলার সময় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাসহ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম ও মসজিদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও পাগলা মসজিদের এতিমখানাসহ দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মচারী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৪০০ জন টাকা গণনা করেন।

 

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ৬ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যেখানে একত্রে অর্ধলাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ইতিমধ্যে কমপ্লেক্স নির্মাণে পরামর্শক হিসেবে প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে।

 

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সকালে ২৪ ঘন্টা বাংলাদেশ কে বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। গত ৩০ নভেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ব্যাংকে এখন মোট ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা আছে। আজকের টাকা গণনা শেষে রুপালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় করা জমা হবে।

 

পাগলা মসজিদে এ পর্যন্ত কত টাকা জমা হলো, কোথায় ও কীভাবে খরচ হয় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে সিন্দুক খোলা ও বস্তায় ভরে গণনা শেষে ব্যাংকে টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। গণনার দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সিন্দুকের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়া স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষজন।

Leave a Reply

scroll to top