আর মাত্র একদিন পরই বাংলা ১৪৩২ সালের প্রথম দিন। সেই নববর্ষকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চারুকলা অনুষদে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যুক্ত হয়েছে বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা। “নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে চারুকলার শিক্ষার্থীরা আয়োজন করছে নববর্ষ উদযাপন। এতে থাকছে গাজীর পট, বাঘ, পাখি, মুষ্টিবদ্ধ হাতসহ বিভিন্ন প্রতীকী উপকরণ।
ঈদের ছুটির আবহ এখনো কাটেনি, কিন্তু চারুকলার প্রতিটি কোণে শিক্ষার্থীরা মগ্ন নববর্ষের প্রস্তুতিতে। প্রায় ছয় বছর পর এত বড় পরিসরে আয়োজিত এই শোভাযাত্রা ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উচ্ছ্বাস।
চারুকলায় ঘুরে দেখা যায়, কেউ রঙ-তুলি হাতে ব্যস্ত মুখোশ আঁকায়, কেউ বা শোলা ও কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন ঐক্যের প্রতীক। মাটির পটে আঁকা হচ্ছে লোকজ নকশা, আর চারুকলার দেওয়ালজুড়ে ফুটে উঠছে বর্ণিল আলপনা।
প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ থাকছে “ব্যাঙের বিয়ে”। পাশাপাশি ঘোড়া, ব্যাঙ, পাখি ও অন্যান্য মুখোশও শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে।
আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য, ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আরমান বলেন, “আমাদের বাংলাদেশে এত বছর ধরে যে সাম্প্রদায়িকতা চলে আসছে, তা থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় একাত্মতা পোষণ করছি। এই উদ্দেশ্যেই আমরা শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। যেহেতু বাংলাদেশ লোকশিল্পে সমৃদ্ধ, তাই লোকশিল্পের অংশ হিসেবে গাজীর পটের আয়োজন করেছি। এই গাজীর পট হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও আদিবাসী—সবার একত্রিত অবস্থান বোঝায়। বাংলায় আমরা কেউ আলাদা নই; বরং সবাই এক।”
চারুকলা বিভাগের সভাপতি শামীম রেজা বলেন, “’নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এই প্রতিপাদ্যে আমরা শোভাযাত্রা আয়োজন করছি। একটি ফ্যাসিবাদী অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে, তাই আমরা চাই না ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশে জন্ম নিক। আমরা যেন এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পারি—এই প্রত্যাশাই করছি নতুন বছরে।”
অনুদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “আসলে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারি কোনো ফান্ডের জন্য আবেদন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় যদি উদ্যোগ নিত, তাহলে হয়তো সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান পাওয়া যেত। ঈদের ছুটির কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে, ফলে এখন আয়োজনের ওপর চাপ পড়ছে। যারা আয়োজনে যুক্ত, তাদের আপ্যায়নের কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি; তারা সম্পূর্ণ মানবিক কারণেই কাজ করছেন।”
জাবিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীরা শুধু শিল্পচর্চাই করছেন না, বরং একটি সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন—অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে। শোভাযাত্রার প্রতিটি উপকরণে থাকে পরিবেশ, সমাজ ও সংস্কৃতির নানা রঙ ও বার্তা।