দেশকে পুনর্গঠন করতে জাতিকে এক ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুরে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা সংক্রান্ত এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেন, লাখো কোটি মানুষের মিলিত প্রচেষ্টায় স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ঠিক সেভাবে বিএনপি একা দেশ গড়তে পারবে না। চাই দেশকে পুনর্গঠন করতে জাতিকে এক ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এজন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
জুলাই-আগস্ট মাসে সবাই যেভাবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সেভাবে দেশ পুনর্গঠন করার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে বিএনপি একা পারবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এজন্য কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে বিএনপিকে। বিএনপির একক আন্দোলন সফল হয়নি। অনেক রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একসঙ্গে নেমে এসেছিল বলে আমরা আন্দোলনকে সফল করতে পেরেছি। তাই আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। আন্দোলনরত যে দলগুলো ছিলাম, একসঙ্গে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা চাই সব দলকে নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করতে যাতে মানুষ তাদের মতামত রাখতে এবং সবাই মিলে কাজ করতে পারবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আগামী নির্বাচন জাতির জন্য কঠিন পরীক্ষা হবে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। কারণ, গত ২০ বছর ধরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন আবার তারা ভোট দিতে পারবে, তাই এই নির্বাচন হবে আরও কঠিন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রসঙ্গ নিয়ে কর্মীদের ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারলে তবেই মনোনয়ন মিলবে বিএনপির। বিএনপির আস্থা ধরে রাখতে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।
ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় সেটি নেতাকর্মীদের মনে করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা। যারা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল, তারা এখন নেই। তাদের জনগণের আস্থা হারানোর কারণে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপির প্রতি জনগণের যে আস্থা রয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং বিগত সময়ের মতো জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের মধ্যে কোনো কোন্দল যেন না হয়।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ৩১ দফা শুধু আমাদের দলীয় দাবি নয়, এতে গণতান্ত্রিক অনেক রাজনৈতিক দলের মতামতও রয়েছে। এই ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। ১৭ বছর ধরে আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব ধর্মের মানুষদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। এ সময় বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হবে বলেও নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন তিনি।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্কুল পর্যায় থেকে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে জনশক্তি তৈরি করা হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেশে কোনো বেকারত্ব না থাকে সেই ব্যবস্থা করবে বিএনপি। সরকার গঠন করতে পারলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি করা হলে গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরে শহীদদের স্মরণে সেসব স্থাপনার নামকরণ করা হবে। দেশের আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ক এ কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি। অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক ১০ জেলার নেতাদেরে রাষ্ট্রসংস্কারে দলের ৩১ দফা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল। এতে সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আব্দুল খালেক, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।