দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা সচেতন তাদের বেশিভাগেরই মন খারাপ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ একতরফা শাসনের ফলে অতিষ্ঠ মানুষ স্বস্তি চেয়েছিল। কিন্তু একতরফা শাসনের অবসান হয়েছে ঠিকই মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই ও আগস্ট বিপ্লবে একটি সরকারের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওই সরকারের স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে না। যারা বিনা অপরাধে নাগরিকদের গুম করেছে, খুনের মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে তারা ন্যূনতম লজ্জাবোধও করছে না। অন্যদিকে বিপ্লবের পর একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়, দুর্নীতিবাজরা অনুশোচনা করেন, আত্ম সমালোচনা করেন, অপরাধ ও ভুল থেকে দূরে সরে পরবর্তী সময়ে কল্যাণকর ভূমিকায় থাকেন, কিন্তু না- এমন পরিস্থিতি খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
জুলাই বিপ্লবের পর সরকারি দফতরে ঘুষ-দুর্নীতি ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু না কমেনি। ঘুষ গ্রহিতারাও রয়েছে বহাল তবিয়তে। একজন পিয়নের মধ্যেও আত্মশুদ্ধি আসেনি। সচিবালয়ে একটি দফতরে সরকারি ফরম নেয়ার জন্য ওই দফরতের পিয়নকে এখনও নগদ টাকা নিয়ে খুশি করতে হয়। একজন ভুক্তভোগীর ফাইলের তদবির নয়, শুধু ফাইলটির অবস্থান কি বা কোন পর্যায়ে রয়েছে তার খোঁজ নিতে দফতরের ফাইল সংশ্লিষ্ট কর্মচারীও পয়সা চান। দফতরের একটি ফাইল এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে এখনো দীর্ঘ সময় লাগে। শুধু একটি স্মারক নম্বর উল্লেখ করা ছাড়া কোনো কাজ না থাকলেও তবদির বা ফোনের অভাবে ওই ফাইল পড়ে থাকে দিনের পর দিন। অথচ কাজটি ওই মন্ত্রণালয়ের কয়েক মিনিটের ব্যাপার।
সরকারি দফরতে এখনো অসংখ্যা কর্মী অলস সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু সেবা নিতে আসা নাগরিকরা এই রুম থেকে সেই রুম, এই ভবন থেকে সেই ভবনে দৌড়াচ্ছেন। যে নাগরিকদের টেক্স ও ভ্যাটের টাকায় সরকারি অফিসার এবং কর্মচারীর বেতন হচ্ছে সেই নাগরিকরা সেবা নিতে এসে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এখনও। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রেখে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষিত এই অফিসারদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা নেই। একটুও ভাবে না যে সেবা নিতে আসা এই মানুষগুলোর টেক্স ও ভ্যাটের টাকায় আমার রোজগার হয়, আমি অন্তত সঠিকভাবে সেবাটা দেই। কিন্তু না, কিভাবে জিম্মি করে, বেকায়দায় ফেলে পয়সা ইনকাম করা যায় সেই ফিকিরই বেশি। কিছু সৎ অফিসার রয়েছেন যারা নীতি ও আদর্শ মেনে কাজ করতে চাইলেও পারছেন না। কারণ, চার পাশের দুর্নীতিবাজরা তার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলেন। দুর্নীতিবাজদের ঐক্যও অনেকটা দৃঢ় হয়, ফলে এই দেশ কবে কখন দুর্নীতিমুক্ত হবে তা বলা মুশকিল।