সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরপূর্বক হিজাব খোলার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা রনির বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২ মার্চ) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘শিক্ষাভবন-ডি’র সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সদস্যসচিব হাফিজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈছাআ’র আহ্বায়ক পলাশ বখতিয়ার।
পলাশ বখতিয়ার বলেন, ছাত্রীরা পর্দা করে এজন্যই যে কোনো পুরুষ তাকে দেখবে না। পরীক্ষার সময় ভেরিফিকেশনের নামে তিন ঘন্টা যাবত মুখ খোলা রাখা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। ভেরিফিকেশনের দরকার হলে গোপনীয়তার মাধ্যমে করা উচিত। ক্লাস রুম ভেরিফিকেশনের জায়গা বলে আমি মনে করি না। এমন কর্মকাণ্ডের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে তার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চাই।
তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত এভাবে চলতে থাকলে এমন ঘটনাগুলো বৈধতা পেয়ে যাবে। তখন পর্দা করাটা হবে অস্বাভাবিক বিষয়। ৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম সব ধরনের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে চলাফেরা করবে। পর্দা করা যেমন মুসলিম মেয়েদের অধিকার। তেমনি সংখ্যালঘু থেকে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করবেন। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমানে আমাদের মুসলিম বোনেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানতে চাই ওনার বিরুদ্ধে (অভিযুক্ত শিক্ষক) কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা ফারজানা ম্যামের অবস্থানও জানতে চাই। ঘটনার সত্যতা আমাদের সামনে তুলে ধরা হোক।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল গাজী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি টি-শার্ট পরে মেয়েরা আসে না? তখন শিক্ষকরা কিছু বলেন না, তাহলে মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরে আসলে সমস্যা হয় কোথায়? এখানে বৈষম্য কেন? টি-শার্ট পরা মেয়েদের যদি পোশাকের স্বাধীনতা থাকতে পারে তাহলে হিজাব পরার স্বাধীনতা কেন থাকবে না?
অভিযুক্ত শিক্ষিকার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি যদি এরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকেন, তাহলে আপনি ভুলে গেছেন চব্বিশের আন্দোলনের কথা। এই আন্দোলন কিন্তু নিয়ম মেনে হয়নি। হাসিনা পালিয়েছে, আপনি যদি ফ্যাসিস্টের দোসর হয়ে থাকেন আপনাকেও পালাতে বাধ্য করা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলোজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ইনকিলাব ফোরামের সভাপতি মুজাম্মেল ইসলাম ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সবুর আহমেদ।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫টি বিভাগীয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় শাবিপ্রবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ওই দিন শাবিপ্রবি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরপূর্বক হিজাব খোলার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা রনির বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা রনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমি সেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাইনা, দুঃখিত।
উল্লেখ্য যে এর আগেও ক্লাসে নিকাব না খোলায় ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রী কে প্রেজেন্টেশন দিতে দেয়নি অভিযুক্ত শিক্ষিকা ।