রমজান শেষের পথে। ঈদের আনন্দের সুবাতাস যেন এখনই বইতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি ও কেনাকাটা। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সেই প্রস্তুতি একটু ভিন্ন। এখানে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি যাওয়াই যেন ঈদের আনন্দের অংশ।
গত ২৩ মার্চ পবিত্র রমজান, শবে কদর, জুমাতুল বিদা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস ৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট সতেরো দিন বন্ধ থাকবে।
এদিকে, যতই রমজানের দিন ফুরিয়ে আসছে, ক্যাম্পাস ততই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন প্রিয়জনদের ছেড়ে, আপনালয় ছেড়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা ও পরীক্ষার ব্যস্ততা শেষে এবার বাড়ি ফেরার পালা।
আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাম্পাসে আসা আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম রাহি বাড়ির উদ্দেশ্যে হল ছাড়ছিলেন। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রায় সাড়ে সাত মাস পর নিজ বাড়ি যাচ্ছি। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেছিলাম ক্যাম্পাসে। ক্লাস-পরীক্ষাসহ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম নিয়মিত চলায় আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ছিলাম। অবশেষে আজকে যাচ্ছি, খুবই আনন্দ লাগছে।’
জানুয়ারিতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি। একটানা ক্লাস ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষার কারণে বাড়ি যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন মাস পর বাড়ি যাচ্ছি। মনে হচ্ছে তিন মাস নয়, এক বছর পর যাচ্ছি। টানা ক্লাস ও পরীক্ষায় হাঁপিয়ে গেছি। এবার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। আশা করি ভালো সময় কাটবে।’
বাড়ির পথে বের হচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নাবিলা বিনতে হারুন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এবারই প্রথম বাড়ির বাইরে রমজানের দিনগুলো কাটালাম। ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় হলেই থাকতে হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার-সেহরিতে ভালো সময় কাটালেও পরিবারের শূন্যতা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেছি। বিশেষ করে বসন্তের এই সময়ে ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা শীতলক্ষ্যার পাড় সবচেয়ে বেশি মিস করেছি। তাই দীর্ঘ ছুটির পর বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। আশা করি এবারের ঈদ অনেক ভালো কাটবে।’
ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, ‘আমার ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আজই ঈদ শুরু হয়ে গেছে। বাসায় পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করব। অনেক খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টা ও আড্ডা হবে। প্রিয় মুখগুলোকে অনেকদিন পর একসঙ্গে দেখাটা বিশেষ আনন্দের।’
মায়ের হৃদয়ের আহ্বান ও প্রিয়জনদের টান যেন ঈদুল ফিতরের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ২০ রমজানের পর থেকে জাবি ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে বাড়ি ফেরার হিড়িক।