জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে কাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় (২৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এ প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।
তিনি বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং কঠিন ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে তোমরা সৌভাগ্যবান। এই সুযোগকে সদ্ব্যবহার করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডল বিশাল। এই বিশালত্বের মধ্যে ভালো-মন্দ সবই রয়েছে। তোমরা ভালোকে গ্রহণ কর। নিজেকে শুদ্ধ, মার্জিত, রুচিশীল এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলো।
ইউজিসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। তোমরা যে অসীম সাহস নিয়ে ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছো, সেই সাহসের আলোকধারা প্রবাহিত হবে রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোতে। তোমরা নতুন বাংলাদেশ রচনা করবে যেখানে ন্যায়, সাম্য, যুক্তি প্রাধান্য পাবে। মানুষে মানুষে পরস্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধায় মানবিকতার অনন্য নিদর্শন তোমরা ফুটিয়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়ণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণে নবীন শিক্ষার্থীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ। উপাচার্য বলেন, রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিকের করের টাকায় সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও যাবতীয় ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করা হয়। পাশাপাশি অভিভাবকের কষ্টে অর্জিত অর্থে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জন করে। ফলে দেশবাসী এবং পরিবারের প্রতি তোমাদের নৈতিক ও যৌক্তিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই দায়দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে বিজ্ঞানের নানা শাখায় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি তাই নৈতিক শিক্ষা ও এর চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
উপাচার্য বলেন আরও বলেন , শিক্ষা শুধু পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমিত নয়, সমাজ ও প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষার উপকরণ। ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ উপলব্ধিকে ধারণ করবে এবং সকলেই নিজেকে মানবিক গুণসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন এবং ভিন্নমত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবে- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে দুইজন নবাগত শিক্ষার্থী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ বি এম আজিজুর রহমান ভর্তিকৃত নবীন শিক্ষার্থীদের পাঠ দানের জন্য ডিন এবং ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের নিকট উপস্থাপন করেন এবং সংশ্লিষ্ট ডিন এবং পরিচালক পাঠ দানের জন্য শিক্ষার্থীদের বরণ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক আমিনা ইসলাম।