জাবিতে ছাত্রশিবিরের রমজান ক্যালেন্ডার বিতরণ: ধর্মীয় মূল্যবোধের সেবামূলক উদ্যোগ

New-Project-14.jpg

জাবিতে ছাত্রশিবিরের রমজান ক্যালেন্ডার বিতরণ: ধর্মীয় মূল্যবোধের সেবামূলক উদ্যোগ

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

রমজান— আত্মশুদ্ধির মাস, ত্যাগের মাস, সংযম ও ইবাদতের মাস। মুসলিম বিশ্বে এই মাসটির রয়েছে এক বিশেষ তাৎপর্য। ঠিক এই মহিমান্বিত মাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ— শিক্ষার্থীদের মধ্যে রমজান ক্যালেন্ডার বিতরণ কর্মসূচি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে রমজান ক্যালেন্ডার বিতরণের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পাঁচটি হলে ক্যালেন্ডার বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে বাকি ছাত্র হলগুলোতে ক্যালেন্ডার পৌঁছে দেওয়া হবে এবং ছাত্রীদের হলেও বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রতিবছর মাহে রমজান এলে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষ সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে বিভিন্ন মাধ্যমের দ্বারস্থ হন। কেউ অনলাইনে খোঁজেন, কেউ পত্রিকার পাতা উল্টে দেখেন, আবার অনেকেই রেডিও বা টিভির মাধ্যমে সময়সূচি অনুসরণ করেন। তবে হাতে একটি প্রিন্টেড ক্যালেন্ডার থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সময় জানা সহজ হয় এবং বারবার খোঁজার ঝামেলা এড়ানো যায়।

এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ছাত্রশিবিরের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ক্যালেন্ডারটিতে শুধুমাত্র সাহরি ও ইফতারের সময়সূচিই নয়, বরং সাহরি ও ইফতারের দোয়া, রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত, করণীয়-বর্জনীয় বিষয়াবলি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে এটি শুধু একটি সময়সূচি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সেল্ফ রিমাইন্ডার হিসেবেও কাজ করবে।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, “রমজান আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে সবাই যেন সময়মতো সাহরি ও ইফতার করতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটি শুধু একটি ক্যালেন্ডার বিতরণ নয়, বরং দাওয়াতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবেও আমরা এটিকে দেখি।”

শাখা শিবিরের সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর রমজান আসে আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে, আসে আত্মত্যাগ ও সংযমের শিক্ষা দিতে। এই সময় একজন মুসলমানের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা এবং নৈতিক মূল্যবোধে নিজেকে আলোকিত করা। আমরা আশা করছি ছাত্রশিবিরের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডার বিতরণ কর্মসূচি নয়, বরং সেবামূলক ও দাওয়াতি উদ্যোগের একটি সুন্দর উদাহরণ। যদি এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীও সচেতন হয়, ইবাদতে আরও একাগ্র হয়—তবে সেটাই হবে এই উদ্যোগের প্রকৃত সার্থকতা।

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা রমজানের গুরুত্বকে উপলব্ধি করুক, নিয়মমাফিক সময়সূচি অনুসরণ করুক এবং তাদের ইবাদত-বন্দেগিকে আরও সুগঠিত করুক।”

শিবিরের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। অনেক শিক্ষার্থীই জানিয়েছেন, হাতে একটি প্রিন্টেড ক্যালেন্ডার থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সাহরি-ইফতারের সময় জানা যায়, যা অনলাইন বা অন্যান্য মাধ্যমে খোঁজার চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক বলেন, ‘আমরা প্রায়ই অনলাইনে সাহরি ও ইফতারের সময় খুঁজে বের করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি। বিশেষ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সময়সূচি একসঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হয়। কিন্তু এই ক্যালেন্ডারে নির্ভুলভাবে সবকিছু দেওয়া আছে, যা আমাদের জন্য সত্যিই উপকারী।’

আরেক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ নুর বলেন, ‘ক্যালেন্ডারটি শুধু সময়সূচিই দেয়নি, বরং রমজানের দোয়া, ফজিলত ও করণীয় বিষয়েও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে, যা আমার খুব ভালো লেগেছে।’

Leave a Reply

scroll to top