খুন-খারাবি, চুরি-ছিনতাইর ব্যাপকতা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, শুধু রাজধানীতে গেল ছয় মাসে খুনের ঘটনা আড়াই’শ প্রায়। আর চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি ৭৭২ টি। এসব ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাতের আঁধারে রাজধানীতে অপরাধ সবচেয়ে বেশি। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর দেশের পট পরিবর্তন হয়েছে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেন নেতিবাচক দিকটা যেন মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাত নামলেই রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে অস্ত্রবাজরা। করে চুরি-ছিনতাই- ডাকাতি ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে গেল ছয় মাসে খুন-খারাবি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনাও অনেক। এর মধ্যে বেশি খুন হয়েছে জানুয়ারি ও আগস্টে। ডাকাতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি অক্টোবর-নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে।
এদিকে দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অপরাধের এমন ব্যাপকতার জন্য বেকারত্ব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জনগণের অনাস্থাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তবে এই পরিস্থিতির জন্য অভিযোগের আঙ্গুল উঠছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর উপরও।
এরই মধ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদ জানিয়ে রোববরা রাত থেকেই পদত্যাগ দাবি তুলে মিছিল সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা গেছে একই চিত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছিন অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোহেল রানা নামে একজন লিখেছেন, দেশের রাজধানীর আইনশৃংঙ্খলা যে অবনতি তার দায় কে নিবে? আর ট্রাফিক পুলিশ কি করে ৩জন করে গাড়িতে চড়ে বেড়াচ্ছে অহরহ সিগনালে আটকানো হচ্ছে না বা মামলা দেওয়া হচ্ছে না কেন? আইনশৃঙ্খলা কন্ট্রোল করতে না পারলে সেই এলাকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে অপসারণ করুন আর কঠোরতার দেখান ঢাকা শহর এখন ভয়ের শহর হয়েছে। আগে ছিলো ক্রসফায়ার আর গুমের ভয় এখন হচ্ছে ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের ভয়। এই ভয় থেকে নগরবাসী সহ সারা দেশবাসীকে মুক্ত করুন না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করুন।
ইমন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, অনতিবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা’র পদত্যাগ চাই।
মারুফ আল সিদ্দকী নামের আরও একজন লিখেছেন, যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ, তার সেই পদে থাকার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগ চাই।
তবে এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর। সংবাদ সম্মেলনে তার পদত্যাগের দাবির বিষয়টি তুলে ধরে সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার পদত্যাগের দাবি তো আজই প্রথম না।
এর আগে রোববার রাত ৩টায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভীর রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেদিন রাতে রাজধানীর বারিধারায় ডিওএইচএসের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই তার বাসায় আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এদিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে দেখা যায় হাসনাত আব্দুল্লাহকে। তবে এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কথা বলেননি।