কিশোরগঞ্জে গভীর নলকূপেও উঠছে না পানি, তীব্র খাবার পানির সংকট

New-Project-19.jpg

কিশোরগঞ্জে গভীর নলকূপেও উঠছে না পানি, তীব্র খাবার পানির সংকট

২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ জুবাইদ সাদিক, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ জেলার প্রায় সব-কটি উপজেলাতেই তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানির জন্য জেলাজুড়ে একপ্রকার হাহাকার শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৩ উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর গভীর নলকূপের একটি দিয়েও পানি ওঠে না। বিশেষত তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামে ব্যাপক খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কারো বাড়ির নলকূপেই উঠছে না পানি।

ওই গ্রামেরেই বাসিন্দা সবুজ আলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে চৈত্র মাস পর্যন্ত পানি পাওয়া যেত, এবার বৈশাখের আগেই পানি উঠছে না নলকূপে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী, যাদের সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে, সেখানে ঘটিবাটি-কলস নিয়ে ভিড় করছে। রোজার সময়েও পানির জন্য এমন কষ্ট করতে হয়েছে বলে জানান সবুজ আলী।

নিজেদের গোসল, গবাদি পশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না পানির অভাবে। গ্রামের খোকন মিয়া, বশির আলী ও রেখা আক্তার মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস আগে তাদের বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছেন। এক-দেড় মাস পানি পেয়েছেন। রেজার মাস থেকে তাঁদের নলকূপে আর পানি উঠছে না।

ধারদেনা করে ৭০ বছর বয়সী কুলসুম বেগম গভীর নলকূপ বসিয়েছিল বাড়িতে। এখন এই নলকূপ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। পানি না ওঠায় এর মাথাটি খুলে রেখেছেন ঘরে। এখন একটু খাবার পানির জন‌্য দূর-দূরান্তে যেতে হয় তাঁদের। সচ্ছল ব‌্যক্তিরা, যাঁরা সাবমারসিবল নলকূপ বসিয়েছেন, সেখান থেকে অন্তত খাবার পানিটুকু জোগাড় করেন তাঁরা।

জেলা জনস্বাস্থ‌্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোতে আর পানি উঠছে না। ফলে কিশোরগঞ্জ সদর তাড়াইল,করিমগঞ্জ উপজেলায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু এই তিন উপজেলা নয়, জেলার ১৩টি উপজেলাতেই কমবেশি পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

 

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ‌্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে আমাদের দেশের শহর ও গ্রামে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট নিচ থেকেও পানি ওঠে না। ফলে অনেকে ৫০০-৬০০ ফুটের সাবমারসিবল নলকূপ ব‌্যবহার করছেন। পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানির ব‌্যবহার কমাতে হবে। নদ-নদী খনন করে পানি ধরে রাখতে হবে। নইলে এই সংকট আরো তীব্র হবে।’

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সদর উপজেলার যশোদলের বীরদামপাড়া গ্রামে। এখানকার লোকজন পানির সংকট থেকে অনেকটাই মুক্ত। বিভাগীয় শহরের মতো পাম্প বসিয়ে গ্রামে পানির সাপ্লাই লাইন বসিয়ে দিয়েছে। এর গ্রাহক রয়েছে কয়েক শ। যাঁরা পানির এই লাইন নিয়েছেন, তাঁদের কোনো সংকট নেই।

কিশোরগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার নলকূপ রয়েছে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্যসংখ‌্যক নলকূপে পানি উঠছে না বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু এর সংখ‌্যা আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় পানির সংকট বেশি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, কৃষিকাজে মাটির নিচের পানি বেশি ব্যবহার করা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে। এর সাময়িক সমাধান হচ্ছে, সাবমারসিবল পাম্প। আমরা বর্তমানে সাময়িক সমাধান নিয়ে কাজ করছি। আর বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

 

Leave a Reply

scroll to top