একাত্তরের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সুসম্পর্কে শঙ্কিত ভারত

New-Project-2025-03-17T160505.192.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ ডেস্ক

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের চমকপ্রদ ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে  শঙ্কিত হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী দেশ ভারত।

গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন । এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমকপ্রদ হলো এককালের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা। সোমবার (১৭ মার্চ) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দশক ধরে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর গত মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। এছাড়া সরাসরি ফ্লাইট চালু, সামরিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, ভিসা প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার খবরও প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে ছিল তিক্ততা। বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছিল, যেখানে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। তবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের সময় দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উন্নতি হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো ও পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্কটি কৌশলগত। তারা একসঙ্গে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছে।

২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন ভীনা সিকরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য ‘ডেজা ভু’ মুহূর্তের মতো। তার মতে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ইস্যুগুলো সমাধান না হলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। যুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি নিহত হয় এবং হাজার হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ৯০ হাজারের বেশি পাকিস্তানি নিরাপত্তা ও বেসামরিক কর্মী ভারত ও বাংলাদেশি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়, যা ইসলামাবাদে একটি অপমানজনক অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়। যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে কিন্তু ইসলামাবাদ তা করতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই দেশ প্রথমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম, যা বেশিরভাগই পাকিস্তানের পক্ষে। ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সাবরিন বেগ বলেছেন, পাকিস্তানের ২৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি একটি বড় বাজার।

Leave a Reply

scroll to top