যেখানে নিজেরদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে সেখানে প্রতিশোধ তো নিতেই হতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াটওয়াশ হলেও তার শোধ যেন এবার তোলা হল টি-টোয়েন্টিতে। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে এবার ফিরিয়ে দিল একই স্বাদ। সিরিজের শেষ ম্যাচে জাকের আলি অনিকের ফিফটির পর সম্মিলিত বোলিং আক্রমণে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস বাংলাদেশের।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে ৮০ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়েছে লিটন দাসের দল। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
শুক্রবার সেন্ট ভিনসেন্টে আগে ব্যাট করে করে জাকেরের ৪১ বলে ৭২ রানে ভর করে ১৮৯ রান করে লাল সবুজের দল। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে থামিয়ে দেয় স্রেফ ১০৯ রানে।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন সৌম্য সরকারের চোটে সুযোগ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন। তার সঙ্গে মিলে বাজে ছন্দ কাটানোর আভাস দিচ্ছিলেন লিটনও। ৪ ওভারে চলে আসে ৪০ রান। পঞ্চম ওভারে জোর করে পুল মারার চেষ্টায় ফেরেন ১৩ বলে ১৪ করা লিটন, অধিনায়কত্বে পুরো মার্কস পেলেও ব্যাটিং দিয়ে আবার হতাশ করলেন তিনি। পরের ওভারে আরেক ছক্কা মারার পর বিদায় নেন ইমনও। পাওয়ার প্লেতে আসে ২ উইকেটে ৫৪ রান।
পাওয়ার প্লের পর গুডাকেশ মোটি এসে তুলে নেন তানজিদ হাসান তামিমকে। পুরো সিরিজে ব্যর্থ তামিম এবার ফেরেন ৯ বলে ৬ রান করে। এরপর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকের আলি অনিকের সঙ্গে গড়ে তুলেন জুটি। ৩১ বলে ৩৭ রানের জুটির পর ২০ বলে ২৭ করে ছক্কার চেষ্টায় থামেন মিরাজ।
এরপর জাকেরের সঙ্গে যুক্ত হন আগের ম্যাচের ক্যামিও খেলা শামীম হোসেন পাটোয়ারি। প্রথম দুই ম্যাচের হিরো এবার ব্যর্থ, ৪ বলে ২ রান করে হোন রান আউট শামীম। যদিও এই রান আউট নিয়ে হয় নাটকীয়তা, জাকেরকে শুরুতে আউট দেওয়ায় তিনি চলে যান ড্রেসিংরুমে। পরে চতুর্থ আম্পায়ারকে তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনেন, আউট দেয়া হয় শামীমকে। খানিক পর আরেক রান আউট, এবার বিদায় নেন শেখ মেহেদী হাসান।
রান আউট ভেবে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়ে আবার ফেরা জাকের এরপর সুপার হিরো। ১৬ বলে ১৭ থেকে করেন ৪১ বলে ৭২। তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ২৬ বলে ৫০। শেষ ওভারে পর পর তিন ছক্কায় দলকে নেন দুইশোর কাছে। যা দিয়ে ম্যাচ জেতা অনায়াসে হয়ে যায় বাংলাদেশের।
১৯০ রান তাড়ায় নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় বলেই খায় ধাক্কা। পুরো সিরিজে দারুণ বল করা তাসকিন আহমেদ এলবিডব্লিউতে খালি হাতে ফেরান ব্র্যান্ডন কিংকে। অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রেইভসকে পরের ওভারে তুলে নেন শেখ মেহেদী। ৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে পাল্টা আক্রমণে টেনে তুলছিলেন নিকোলাস পুরান-জনসন চার্লস। দ্রুত রান আনে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন তারা। তবে ৩৮ রানের জুটিটি থামান শেখ মেহেদী। এক ছক্কার পর আরেকটি মারতে গিয়ে বোল্ড হন ১০ বলে ১৫ করা পুরান।
খানিক পর চার্লস আয়েশি ভঙিমায় রান নিতে গিয়ে হন রান আউট। ৪৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ক্যারিবিয়ানরা। অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল খাদের কিনার থেকে তার দলকে জাগাতে পারেননি। ১২ বল খুইয়ে স্রেফ ২ রান করে রিশাদ হোসেনের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
৬০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর স্বাগতিক দলের হাল ধরেন রোমারিও শেফার্ড। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ১৫তম ওভারে জোড়া শিকার করে রিশাদ হোসেন সে চেষ্টা শেষ করে দেন। গুদাকেশ মোতি আর আলজেরি জোসেফকে ৪ বলের ব্যবধানে ফেরান এই লেগি। পরের ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের বলে ফেরেন শেফার্ড। ২৭ বলে ১ চার আর ৩ ছক্কায় শেফার্ডের ৩৩ রানই হয়ে থাকে ক্যারিবীয় ইনিংসের সর্বোচ্চ। পরের ১৪ রানে বাকি উইকেটগুলো নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল। শেখ মেহেদী হাসান ১৩ রানে পান ২ উইকেট, ৩০ রানে ২ শিকার ধরেন তাসকিন আহমেদ। একটি করে উইকেট নেন বাকি দুই পেসার তানজিম সাকিব ও হাসান মাহমুদ। ম্যাচসেরা হয়েছেন জাকের আলী। সিরিজ সেরার ট্রাফি উঠেছে শেখ মাহেদির হাতে।
