আলু ৮ টাকা কেজি হওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত!

New-Project-2025-03-24T172140.735.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরেও আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন কুড়িগ্রামের চাষিরা। আর বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় সিন্ডিকেটের দখলে ছিল আলু বীজের বাজার।

রাজশাহীতে আরেকদফা আলুর দামে ধস নেমেছে। গত তিনদিনে রাজশাহীর মাঠে ৮ থেকে ৯ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, গত ৩০ বছরে মাঠে আলুর দামে এমন বিপর্যয় তারা দেখেনি। অনেক কৃষক বিক্রি করতে না পেরে আলু ফেলে দিচ্ছেন ভাগাড়ে। আবার কেউ রেখে দিচ্ছেন খোলা মাঠে। অনেকেই জমি থেকে আলু তুলছেন না।

সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের বীজ আলু কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এর ফলে আলু উৎপাদনের ব্যয় প্রতি একর জমিতে বেড়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে তাই লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা।

কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার প্রায় সব উপজেলায় হচ্ছে আলুর চাষ। সমতল ভূমিতে যেমন চাষ হচ্ছে, তেমনি চাষ হচ্ছে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ প্রায় সবগুলো নদ-নদীর অববাহিকায়। জেলার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার হেক্টর হলেও চাষ হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে সার ও কীটনাশকের সঙ্গে বীজ আলুর বাড়তি দামে আলু চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। সরকার নির্ধারিত ৬০ টাকার বীজ আলু কৃষকদের কিনতে হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

কৃষকদের দাবি, যে টাকায় শ্রমিক ভাড়া করে আলু তোলা হচ্ছে সেই আলু বিক্রি করে শ্রমিক খরচই উঠছে না। হিমাগার মালিক ও মজুতদারদের কারসাজিতে আলুর অস্বাভাবিক দরপতন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে আলুর দাম নেই। এখন আলু বেচে কৃষকের জমি ইজারার খরচই উঠছে না। যেসব কৃষক হিমাগারের অগ্রিম বুকিং পেয়েছিলেন তারাও হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। অনেকেই অগ্রিম কোনো বুকিং ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোর করে আলু হিমাগারে ঢুকাচ্ছেন। ফলে অসহায় অনেক কৃষকের আলু জমিতেই পড়ে রয়েছে।

কৃষকের অভিযোগ, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একটি সিন্ডিকেট বুকিং ছাড়াই জোর করে আলু হিমাগারে দিচ্ছে। দলীয় সিন্ডিকেট আলু রাখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কৃষকের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে রহমান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আব্দুল মুনিম বলেন, ‘দলীয় লোকেরা এসে কিছু আলু রাখতে চাচ্ছেন। আমরাও তাদেরকে না করতে পারছি না। তবে সেটার পরিমাণ বেশি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু হয়েছে। এ কারণে হিমাগারগুলোতে জায়গা হচ্ছে না।’

আলুর দরপতন নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোতালেব হোসেন জানান, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। ফলে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।’

Leave a Reply

scroll to top