আতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ দিতে পারবে, সেই দলটাকে খুঁজে বের করুন: ডা. শফিকুর রহমান

New-Project-2025-01-25T184335.122.jpg
নিজস্ব প্রতিবেদক

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের লোকজনের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ দিতে পারবে, সেই দলটাকে খুঁজে বের করুন। ২৫ জানুয়ারি শনিবার দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার লড়াই আর মজলুমানের চোখের পানির ফোটার কারণে আমরা এই নতুন দেশ পেয়েছি। বন্ধুদের আহ্বান জানাই এমন কথা এমন আচরণ না করি-যাতে আমাদের সন্তানরা মনে কষ্ট পায়।

কর্মী সম্মেলনে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী অধ্যক্ষের বক্তব্যের সূত্র ধরে আমীরে জামায়াত বলেন, এখানে একজন হিন্দু ধর্মের সম্মানিত নেতা ভাই একটা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন; তিনি বলেছেন এমন একটা বাংলাদেশে আমরা বসবাস করতে চাই, যে বাংলাদেশে আমাদের আর আতঙ্কে থাকতে হবে না। আমি তাদের বলি কারা আতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ দিতে পারবে, সেই দলটাকে খুঁজে বের করুন।

যারা বিগত ৫৪ বছরে আপনাদের জমাজমি দখল করেনি, আপনাদের সম্পদ লুন্ঠন করেনি, আপনাদের ইজ্জতের ওপর হাত দেয়নি। সেই দলকে আপনারা খুঁজে বের করুন। একটু বিবেকের চক্ষু দিয়ে খুঁজে দেখলেই, তাদের পেয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের আশ^স্ত করতে চাই, তোমরা যে বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে বলেছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, আমরা তোমাদের সাথে আছি। তোমাদের অবদানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তোমরা আমাদের অহংকার আমাদের গর্ব। আগামির বাংলাদেশ আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমরা তোমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চাই, দোয়া করতে চাই। মরার আগে দেখে যেতে চাই আমার প্রিয় বাংলাদেশ সাম্য এবং সৌহার্দ্যরে বাংলাদেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি মানবিক বাংলাদেশ। এই মানবিক বাংলাদেশের জন্যই আমাদের সংগ্রাম এবং সাধনা। সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সংগ্রামে আপনাদের পাশে চাই, সাথে চাই।

আমরা বর্তমান সরকারকে বলি- আপনারা অনেক সংস্কারের ব্যাপারে হাত দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব এইসব সংস্কার করুন। তবে আরেকটা বিষয়ে হাত দেন। এটা নিরপেক্ষ সরকার করতে পারবে; দলীয় সরকার হয়তো পারবে না; তাহলো বিগত ৫৪ বছর যাবৎ বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, যাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, সেটা খুন ধর্ষণ লুটপাট দখল চাদাবাজি যা-ই হউক না কেন; এদের নামের কালো তালিকা প্রকাশ করে দেন। এরা কারা জনগণ তাদের চিনে নিক।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট এর আগে ওবায়দুল কাদের সাহেব কয়েকবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিদায় নিলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে ক্ষমতা থেকে বিদায় কিংবা পালানোর দুই দিনের ভেতর তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে খুন করা হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মী কী খুন হয়েছে? তিনি বলেন, হয়নি এই কারণে যে, আওয়ামী লীগের হাত রক্তে লাল থাকতে পারে, তাদের চোখ খুনের নেশায় সব সময় মাতাল হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের সকল জনগণ তাদের মতো নয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোন জায়গায় কোন কিছু ঘটলেই জামায়াতে ইসলামীকে দোষ দেয়। এটা তাদের বদ খাসলত। এরা জাগরণেও জামায়াতকে ভয় পায়, ঘুমের মধ্যেও জামায়াতকে ভয় পায়। জামায়াতের নীতি আদর্শকে ভয় পায়। এই ভয়ের জায়গা থেকে ঘায়েল করতে চায় আমাদের। নিজেরা অপকর্ম করে তার দায় আমাদের ওপর চাপায়। তিনি প্রমাণ হিসেবে বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জের মৎস্য পল্লী, যেখানে হাসিনার জামাই ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি। সেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের একটা পল্লী ছিল। সেই পল্লীতে গিয়ে প্রথমে গরু চুরি করলো। তারপরে সম্পদ লুন্ঠন করলো। তারপর তাদের ঘরগুলোতে আগুন জ¦ালিয়ে দিলো। সাথে সাথে কোন বাছ বিচার না করে ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলে দেওয়া হলো এটা জামায়াত শিবিরের লোকেরা করেছে। তদন্ত ছাড়াই বলে দিলো। যুক্তি দিলো পাশে মিঠাপুকুর উপজেলা। সেখানে জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি। এই কারণে এটা করেছে। মাত্র তিনদিনের মাথায় সাহস করে সেই পল্লীর মজলুম ভাইবোনেরা বলে দিলো জামায়াত শিবির এখানে আসেওনি এগুলো করেওনি। যুবলীগের অমুক নেতার নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে। এই মামলা চলে গেলো সাইবেরিয়ার হিমাগারে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পানিতে কোপ দিলে দা এসে নিজের হাঁটুতে লাগে। হাঁটু বাঁচানোর জন্য মামলা-ই খতম। তিনি আরেকটি উদাহরণ টেনে বলেন, আপানারা গাইবান্ধায় দেখেছেন, সুন্দরগঞ্জের এমপি ছিলেন লিটন সাহেব। তাকে কে বা কারা তার বাড়ির পাশে শুট করে খুন করেছে। সাথে সাথেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, একাজ করেছে জামায়াত শিবির। যুক্তি হলো জামায়াতের তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের জনসভায় লিটন বাঁধা দিয়েছিল। এর প্রতিশোধ এতদিন পর জামায়াত শিবির নিয়েছে। দিন শেষে পুরো তদন্তে জানা গেল, জামায়াত শিবিরের কোন সম্পর্ক এটার সাথে ছিল না। বরং তাদেরই ক্ষমতার পার্টনার যিনি ওই আসনের সাবেক এমপি ছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার পিস্তল দিয়ে গুলি করে তার রাস্তা পরিষ্কার করেছেন।

Leave a Reply

scroll to top