অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের রাজধানী টোকিওতে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতেই আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
বুধবার (২৮ মে) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে চার দিনের সরকারি সফরে টোকিও পৌঁছানোর পর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো আসো-এর সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ মন্তব্য করেন। তারো আসো বর্তমানে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের (জেবিপিএফএল) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
সাক্ষাতে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে—প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, যুদ্ধাপরাধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার খুনিদের বিচার, এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন আয়োজন।”
তিনি জানান, “আগামী নির্বাচন আমাদের গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনাগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করবে। এই সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন।”
প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তরুণ সমাজের মধ্যে যে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে, তারাই আমাকে এই বিশৃঙ্খলা দূর করতে আহ্বান জানিয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি এই দায়িত্ব নিয়েছি কেবল দেশের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানানোর জন্য।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় ড. ইউনূস বলেন, “এই সংকট অন্যান্য আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংকট থেকে ভিন্ন, কারণ রোহিঙ্গারা অন্য কোনো দেশে যেতে চাচ্ছেন না, তারা কেবল নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরতে চান।”
তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে জাপানের সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে কূটনৈতিক ও মানবিক সহায়তা কামনা করেন।
ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ঋণ পরিশোধে সরকারের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নের নির্ভরযোগ্য সড়কে ফিরেছে।”
সাক্ষাতে জাপানি সংসদ সদস্যরা জানান, ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) স্বাক্ষর বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। বাংলাদেশ আশা করছে, আগস্ট মাসের মধ্যে আলোচনা শেষ করে সেপ্টেম্বরেই চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে। এটি হলে জাপান হবে বাংলাদেশে ইপিএ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ।
ড. ইউনূস বলেন, “গত দশ মাসে জাপান আমাদের প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা দিয়েছে। এটি এক অর্থে একটি কৃতজ্ঞতা সফর।”
তিনি তারো আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি নিজ চোখে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করতে পারেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন
এই সৌজন্য সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
সূত্র: বাসস