জুলাই বিপ্লবের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখছি গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গঠিত হলো জুলাই ঐক্য।
আজ (৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সম্মত সম্মেলনে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিদের কে নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে “জুলাই ঐক্য”। এখন পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত মোট ৩৫ টি সংগঠন এই ঐক্যে যোগদান করেছে।
“জুলাই ঐক্যে”র পক্ষ থেকে বলা হয়, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার অভূতপূর্ব এক জাগরণে সংগঠিত হয় ছাত্র জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাধারণ জনগণ সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিতে হয় দুই হাজারের বেশী মানুষকে। সেই সাথে আহত ও পঙ্গু হন প্রায় ৩১,০০০ মানুষ। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা পরিচালিত এ হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
কিন্তু জুলাই বিপ্লবের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখছি গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত। সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয় এই যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসরকারি মহলের কিছু অংশ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা একদিকে শহিদ, আহত ও পঙ্গু জনগণের আত্মত্যাগের চুড়ান্ত অপমান। একই সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পূনর্বাসন দেশের স্বাভাবিক গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার শামিল। সেই সাথে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শংকিত। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোষরা বিভিন্ন দাবি তুলে জুলাইয়ে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদেরকে বিতর্কিত করতে চায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই, আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ নিয়ে আজ ‘জুলাই ঐক্য’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোটের ঘোষণা করছি।”
জুলাই ঐক্যের পক্ষে আরো বলা হয়, “আমরা মনে করছি সকল প্রকার বিভক্তি দূর করে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণকারী সকল সামাজিক, সংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাই এই জোটের মূল ও একমাত্র দাবি হচ্ছে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও ২৪ এর গণহত্যা, শাপলা ট্রাজেডি, পিলখানা ট্রাজেডি, গুম, খুন, দূর্নীতি সহ বিগত সাড়ে ১৫ বছরে যে সকল অপকর্ম সংঘঠিত হয়েছে তার সাথে জড়িত সকলের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় ক্যাম্পেইন জারি রাখা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণকারী সকল শক্তিকে নিয়ে একতাবদ্ধ ভাবে কাজ করবে আমাদের এই জোট।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আগামীকাল (৭ই মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে জুলাই ঐক্য।
প্রসঙ্গত, উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ইনকিলাব মঞ্চ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ সহ “জুলাই ঐক্যে”র অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা।