আওয়ামী এমপির অর্থায়নে জাবিতে ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচি

New-Project-29-3.jpg
২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস-বি টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তবে কার্যক্রম শুরুর আগেই সেটি স্থগিত হয়ে যায়, যার পেছনে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ১৯ এপ্রিল রাতে এক ঘোষণার মাধ্যমে অনিবার্য কারণে কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানায় সংগঠনটি।

তদন্তে জানা যায়, এ কর্মসূচির জন্য সরকারদলীয় এক সাবেক সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তিনি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তার ঘনিষ্ঠ একজন সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলামের মাধ্যমে এই আর্থিক সহায়তা আসে বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতার মতে, এ কর্মসূচির বাজেট ছিল প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিকেলসের ‘হেপা-বি’ নামক ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য খরচ ধরা হয় প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ফলে বাকি থেকে যায় প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এই উদ্বৃত্ত অর্থের বণ্টন নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়।

যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল হোসেন, আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের মধ্যে এই আর্থিক বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। ফয়সাল অর্থের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে অন্যরা আপত্তি জানায় এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নজরে আনেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক এমপি জাহেদী তার ব্যবসা ও রাজনৈতিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই উদ্যোগে অর্থায়ন করেন। তার ভাই ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং নিজে ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে বিতর্কিত অবস্থানে ছিলেন।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট নেতারা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফয়সাল হোসেন জানান, ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করা হয়নি এবং এটি ছিল একটি সামাজিক উদ্যোগ মাত্র। একইভাবে অন্যান্য নেতারাও কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার কারণ হিসেবে ‘সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা’র কথা উল্লেখ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রদলের এক কর্মী বলেন, ’মূলত টাকা ভাগাভাগি নিয়েই এই ভ্যাক্সিন দেওয়া বন্ধ করা হয়। তবে এই মুহূর্তে কেন্দ্র প্রোগ্রামটি নিতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির বলেন, আমার এবং জাবি ছাত্রদলের মাঝে সমঝোতা হয়নি বলে এ কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে— বিষয়টি সত্য নয়। টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু এ বিষয়ে কেন্দ্র কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ভ্যাক্সিনেশনের বিষয়টি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিক্যালস থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, সাবেক এমপি হিসেবে নয়। আর এটা আনঅফিসিয়ালিই রয়েছে, এখনও অফিসিয়ালি কিছু হয়নি।

তবে বাস্তবতা হলো, অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অনুপস্থিতির কারণে এ উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে। অনেকে মনে করছেন, এটি শুধুই একটি জনসেবামূলক কর্মসূচি ছিল না, বরং এর আড়ালে ছিল প্রভাব বিস্তার এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা হিসাব-নিকাশ।

Leave a Reply

scroll to top