ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ ও বিজেপি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিভাইন স্পেকট্রাম সাস্ট (ডিএসএস)।
রোববার (১৩ এপ্রিল) ডিএসএস এর অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়, ” গত ৩ এপ্রিল ২০২৫, ভারতের লোকসভায় মুসলিম সম্প্রদায়সহ বিরোধী দলের তীব্র বিরোধিতার স্বত্বেও উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের নেতৃত্বে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করা হয়েছে। ডিভাইন স্পেকট্রাম সাস্ট ডিএসএস এই সংশোধনীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই আইনের মূল লক্ষ্য মুসলমানদের দানকৃত মসজিদ, মাদরাসা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দরগাহ শরীফের মতো ধর্মীয় সম্পত্তি গুলোতে সরকারিভাবে অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দখল করা।
এতে বলা হয় হয়, মূলত মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল করতে এই বিল পাস করানো হয়েছে। এই আইনানুসারে, ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে মুসলিম নয় দুজন সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা ওয়াকফের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। ভারতে কোনো মন্দির কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে মুসলিম সমাজের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয় কিনা, আমরা তা বিজেপি সরকারের নিকট জানতে চাই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা দেখতে পাই, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর হতেই নানাভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার জন্য ধারাবাহিকভাবে দমন পীড়ন নীতি অবলম্বন করছে। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় সহস্রাধিক নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে মুজাফফরনগর, ২০১৪ সালে পাটনায়, ২০১৯ সালে দিল্লির দাঙ্গাসহ অসংখ্য ঘটনায় মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়।
ডিএসএস বলছে, ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর মতো মুসলিমবিরোধী আইন পাশ করে মুসলমানদেরকে রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে জুমার নামাজ পড়ায় বাঁধা দেয়া হচ্ছে, গরুর গোশত ভক্ষণ ও সংরক্ষণ করার দায়ে খুনের শিকার হতে হচ্ছে, ধর্মীয় সংবেদনশীলতা প্রত্যাখ্যান করে হিন্দু উৎসবের সময় মুসলিম ধর্মীয় ও সামাজিক স্থাপনা আক্রমণ করা হচ্ছে এবং জোরপূর্বক হিন্দুত্ববাদী স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ দেওয়ানো হচ্ছে।
স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মুসলমানদের সাথে চলমান এসব আচরণ অত্যন্ত গর্হিত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মুসলমানদের সাথে চলমান এসব আচরণ অত্যন্ত গর্হিত এবং সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার পরিপন্থী। সুফি-দরবেশগণ হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও আধ্যাত্মিক সম্প্রীতি গড়ে তুলেছেন। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী, নিজামুদ্দিন আউলিয়া, আমীর খসরু, কবির দাসসহ বহু ফকির-সুফি-দরবেশ ভারতের হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলের নিকট শত শত বছর ধরে সমাদৃত। এসব পীর দরবেশদের মাজার, খানকা, দরগাহ সামাজিক সম্প্রীতি ও অসহায়ের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই ওয়াকফভিত্তিক সম্পত্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
সংশোধিত ওয়াকফ বিল সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্য বিপদজনক দাবি করে ডিএসএস বলছে, আজ মুসলিম স্বার্থবিরোধী ও সংবিধান পরিপন্থী বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে মুসলিমদের শতশত বছর ধরে চলমান ওয়াকফকৃত সম্পত্তিকে বাজেয়াপ্ত করে সরকারি সম্পত্তি ঘোষণা করা হবে এবং মুসলমানদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ভিত্তিশুন্য করে রাষ্ট্রহীন উদবাস্তুতে পরিনত করা হবে। তাছাড়া উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে উপমহাদেশে ধর্মীয় সংঘাত তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সদা তৎপর, যা এই অঞ্চলের সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্য বিপদজনক।
“আমরা ভারতসহ বিশ্বের শান্তিপ্রিয় সকল ধর্ম-বর্ণ, মত-পথের সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের মুসলিম বিরোধী সকল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে এবং বিতর্কিত ওয়াকফ বিল বাতিলে সরকারকে বাধ্য করতে। একইসাথে বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের নিকট ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জন্য আহবান জানাচ্ছি।”