শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাষা সংস্কৃতি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেস (বিআইএল)। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) “ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের জন্য রূপান্তরমূলক ভাষা নীতি” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক মানসুর মূসা এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের জেনারেল এডুকেশন প্রোগ্রামের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড থিয়োরির পরিচালক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। তাঁরা বাংলাদেশের ভাষানীতিতে রূপান্তর ঘটিয়ে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানটির শুরুতে বিআইএল-এর পরিচালক অধ্যাপক শায়লা সুলতানা একটি কনসেপ্ট নোট উপস্থাপন করেন। তিনি ভাষাগত অধিকার, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটি কার্যকর ভাষানীতির জন্য উপনিবেশবাদী, পুঁজিবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণা থেকে সরে এসে স্থানীয় জ্ঞান, ইতিহাস ও বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করা জরুরি।
তিনি বিআইএল-এর উপদেষ্টা লেডি আউনা আবেদের অবদানের কথাও তুলে ধরেন, যিনি ভাষাগত বৈচিত্র্য, সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি ফরাসি ভাষার শিক্ষক ড. তানজেনা সুলতানা খান-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পেছনে দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান তাঁর বক্তৃতায় ফ্রান্ৎ ফ্যাননের চিন্তার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করেন কেন উপনিবেশ-পরবর্তী সমাজে ইংরেজি ভাষার প্রতি পক্ষপাতিত্ব থেকে যায়। তিনি এটিকে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈপরীত্য (intellectual alienation) হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, প্রকৃত মুক্তি আসে সাংস্কৃতিক পরিচয় পুনরুদ্ধার ও আত্মিক মুক্তির মাধ্যমে।
অন্যদিকে, অধ্যাপক মানসুর মূসা ভাষানীতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলেন, উপনিবেশিক যুগ, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ও বিশ্বায়নের প্রভাবে ইংরেজি ভাষার আধিপত্য থেকে বের হয়ে এসে বাংলাদেশের উপযোগী ও বৈজ্ঞানিক ভাষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে ভাষানীতির বিকাশে পরামর্শদাতা কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দশটি ভাষায় পরিবেশিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক অনন্য নিদর্শন।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. তানজেনা সুলতানা খান। এই সেমিনার সফলভাবে ভাষানীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপ এবং বহুভাষিকতায় শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে অবদান রাখে।