সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, নতুন পাঠক তৈরির ব্রত আর লেখালেখির একান্ত যাত্রা—এই তিনটি বিষয় মিলেই ইসমাম জাহান এর গল্প। বই নিয়ে ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রকাশনী সাথে যুক্ত হওয়া এবং অবশেষে নিজের লেখা প্রকাশ করা—এ এক স্বপ্নের পথে হাঁটা। রোজার ঈদের পর তার প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ ‘নির্জন জলছবি’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, যা প্রকাশ করছে তার নিজস্ব প্রকাশনী ‘বিবেক পাবলিকেশন’। এই তরুণ লেখিকার সাহিত্যযাত্রা, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের আজকের ফিচার।
ইসমাম জাহান ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করতেন। পড়তে পড়তেই একসময় অনুভব করেন, বই নিয়ে কথা বলার, বিশ্লেষণ করার এবং নতুন পাঠকদের বইয়ের জগতে আগ্রহী করে তোলার ইচ্ছা তার ভেতরে প্রবল হয়ে উঠছে। তাই তিনি শুরু করেন বই নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করা, যেখানে শুধু বইয়ের রিভিউ নয়, বইয়ের গুরুত্ব, লেখক ও পাঠকের সম্পর্ক, এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা তুলে ধরেন।
এই ভালোবাসা থেকেই তিনি তৈরি করেন ‘প্রজেক্ট কুইন’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ , যেখানে তিনি নিয়মিত বইয়ের রিভিউ ও বিশ্লেষণমূলক ভিডিও প্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে এই প্ল্যাটফর্ম তার নিজস্ব পরিচয়ে পরিণত হয়, যেখানে অসংখ্য নতুন পাঠক তার কাছ থেকে বই পড়ার অনুপ্রেরণা পান।
শুধু বই পড়া বা রিভিউ করা নয়, বরং নতুন লেখকদের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ইসমাম যুক্ত হোন ‘বিবেক পাবলিকেশন’ সাথে। মূল লক্ষ্য ছিল মানসম্মত বই প্রকাশ করা এবং নতুন লেখকদের উৎসাহিত করা। অল্প সময়েই প্রকাশনীটি পাঠকদের মধ্যে পরিচিতি পায়।
বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা এবং নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই প্রকাশনীটির পথচলা শুরু। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে প্রচুর প্রতিভাবান লেখক রয়েছেন, যারা হয়তো সুযোগের অভাবে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছেন না। ‘বিবেক পাবলিকেশন’ সেই প্রতিভাগুলোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে চায়, যেখানে নতুন লেখকদের লেখা প্রকাশিত হবে এবং পাঠকের কাছে পৌঁছাবে।
লেখালেখির প্রতি ইসমামের ভালোবাসা সবসময়ই ছিল, কিন্তু এবার সেটি রূপ পেল তার প্রথম একক কাব্যগ্রন্থে। ‘নির্জন জলছবি’এক অনন্য সংকলন, যেখানে প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং জীবনের একান্ত অনুভূতিগুলো উঠে এসেছে।
এই কাব্যগ্রন্থে তিনি মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, অভিমান, ভালোবাসার আবেগ এবং জীবনের বিভিন্ন রঙকে কবিতার ছন্দে ফুটিয়ে তুলেছেন। এটি শুধুই প্রেম-বিচ্ছেদের গল্প নয়, বরং জীবনযাত্রার একান্ত অনুভূতির চিত্রায়ণ।
তিনি বলেন, “এই বইটি আমার আত্মার একটি অংশ। আমি চাই, পাঠক যখন এটি পড়বে, তখন তাদের জীবনের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে মিল খুঁজে পাবে। প্রত্যেকের জীবনে কিছু নির্জন মুহূর্ত থাকে, যা জলছবির মতো ধরা দেয়, আবার হারিয়ে যায়। সেই অনুভূতিগুলোই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি।”
বর্তমান সময়ে বই পড়ার হার কমে যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিন্তু ইসমাম জাহান তকি মনে করেন, পাঠকের অভাব নেই, শুধু তাদের উপযুক্ত পরিবেশ ও আগ্রহ তৈরি করতে হয়। সে কারণেই তিনি কন্টেন্ট নির্মাণের মাধ্যমে পাঠকদের সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।
তার ভিডিওগুলোতে শুধু বইয়ের গল্প বলা হয় না, বরং বই কেন পড়া উচিত, কোন বই কোন পাঠকের জন্য উপযুক্ত, এবং বই পড়ার অভ্যাস কীভাবে তৈরি করা যায়—এসব বিষয়ও উঠে আসে। তিনি নতুন পাঠকদের জন্য সহজ, আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় বইয়ের পরামর্শ দেন, যা তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
তার মতে, “যদি একজন মানুষও আমার ভিডিও দেখে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা যদি সবাই মিলে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ উপহার দিতে পারব।”
প্রথম বই প্রকাশের পর ইসমাম জাহান তকি থেমে থাকতে চান না। তিনি আরও বই লিখতে চান, আরও সাহিত্যচর্চার মধ্যে থাকতে চান এবং আরও নতুন পাঠকের কাছে বই পৌঁছে দিতে চান। ভবিষ্যতে তিনি গল্প ও উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে মানবিক অনুভূতি, সামাজিক বাস্তবতা এবং সম্পর্কের জটিলতা উঠে আসবে।
তাছাড়া, ‘বিবেক পাবলিকেশন’-কে শক্তিশালী একটি প্রকাশনীতে রূপান্তরিত করতে চান, যেখানে কেবলমাত্র বাণিজ্যিকভাবে সফল বই প্রকাশ নয়, বরং সাহিত্যমান ও পাঠকের চিন্তার জগতে প্রভাব ফেলতে পারে—এমন বই প্রকাশ পাবে। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা, নতুন পাঠক তৈরির প্রচেষ্টা এবং সাহিত্যের প্রতি তার দায়বদ্ধতা তাকে আলাদা করে তুলেছে।
নতুন পাঠক তৈরির এই যাত্রায় তিনি সফল হোক, সাহিত্যের জগতে তার পথচলা আরও সুদূরপ্রসারী হোক—এটাই পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা।