পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদীগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের এ যুগে এসে আরো বেশি করে নদী বাঁচাতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে এতগুলো নদী এদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, আমাদের আরো সৌভাগ্য যে মনির, এজাজ, আলমগীরদের মত নদী কর্মীরা বাংলাদেশে আছে।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ‘নৌপরিবহন ও নাব্যতাঃ চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন দিয়ে শুরু, আমি পরিবেশ আন্দোলন অনেকদিন থেকে করেছি, এখনো করছি ভদ্রভাবে, এখান থেকে আবার যখন ফেরত যাব পরিবেশকর্মীই থাকতে চাই। আমরা দেখেছি যে অন্যান্য পরিবেশ বিষয়ে মানুষের যেরকম আবেগ জাগে নদীর ব্যাপারে মানুষের আবেগ সেরকম ভাবে জাগে না। যার জন্য বাংলাদেশের জেলায় জেলায় আছে নদী রক্ষার আন্দোলন।
তিনি বলেন, একটা বিষয় আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের মূল মূল নদী গুলো প্রতিবেশী দেশ থেকে এসেছে। নদী যখন প্রবাহ হারিয়ে ফেলে তখন আমরা তাকে বলি যে নদীটি মরে গেছে। যখন একটা বিল্ডিং ভেঙ্গে যায় তখন বলে এটা ভেঙ্গে গেছে, এটা মরে গেছে তা কিন্তু বলে না । কিন্তু একটা নদীতে যখন প্রবাহ থাকে তখন সে মাছের জন্ম দেয়, প্রাণের জন্ম দেয়, তার জীবন আছে বলেই সে জীবনের জন্ম দেয়। মৃত সত্তা তো কখনো জীবন দিতে পারে না। নদীর প্রতি অবিচার করাটা আসলে জীবনের প্রতি অবিচার করা হয়।
যেহেতু নদী মানুষের পানির চাহিদা মেটায়, সেচের চাহিদা মেটায় সেহেতু নদীর প্রতি সকল সময়ে নজর রাখতে হবে সরকারকে। নদীর যে ন্যাচারাল ফ্লো টা এটাকে আমরা সম্মান করতে হবে। নদী শেষ মানে মাছ শেষ, পানি শেষ, জীবন শেষ অর্থাৎ নদীর একটি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আছে সেটাও শেষ হয়ে যায়।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প শুরুর সাথে সাথে মনিটরিং করার জন্য একটা কমিটি করে দিচ্ছি। যেমন, ওই কমিটিতে যে এলাকায় কাজ হচ্ছে, প্রকল্পে ওই এলাকার ডিসি থাকবে বা ইউএনও থাকবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা থাকবেন,আর থাকবে একজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন উপকারভোগী।
ওখানে কোন ডিফিকাল্টি থাকলে তারা আমাকে তাৎক্ষণিক জানাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এভাবে আমরা আমাদের কাজগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব। উপদেষ্টা রিজওয়ান হাসান আরও বলেন, আমাকে আপনারা জানাবেন লিখিতভাবে এই এই জায়গায় আপনি যদি সংস্কারগুলো আনেন। এই পদ্ধতিতে যদি আপনি সংস্কারগুলো আনেন তাহলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো অনেক বেশি স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে পারবে তাহলে সেই সংস্কারগুলো আমরা করব।
উপদেষ্টা রিজওয়ান্স হাসান আরও বলেন, আমাকে জানাবেন লিখিতভাবে এই এই জায়গায় আপনি যদি সংস্কার আনেন এই এই পদ্ধতিতে সংস্কারগুলো আনেন তাহলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেক বেশি স্বচ্ছ হবে। একটা কথা বলি। তিনি বলেন টেন্ডারের ক্ষেত্রে যদি লোয়ার প্রাইসটা গোপন থাকত তাহলে একটা কোম্পানি কিভাবে ১৯০ টা কাজ পায়?
ও কেমন করে এতগুলো কাজ পায়? ও কেমনে করে সবকয়টার সর্বনিম্ন দর জানতে পারে? তাকে কেউ না কেউ তাকে জানিয়ে দেয়।এই জানিয়ে দেওয়াটা আমরা আটকাচ্ছি এখন। জানিয়ে দেওয়াটা আর হবে না। আপনি যখন দেখবেন যে ওর অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে তখন কাজের মান কিন্তু ভালো হবে। প্রাইভেট সেক্টর কম্পিটিশনটাকে প্রমোট করার জন্য কোথায় কোথায় আমাদের আইন, বিধি ও পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে সেটা আমাদের জানাবেন। আর আপনারা যদি মনে করেন আপনাদের কাছে কোন তথ্য আছে যেটা জানালে আমি আমার যে শুদ্ধাচারের কাজটা এটা করতে সক্ষম হবো। এটা আমাকে জানাবেন, আপনাদের সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করেই সে কাজগুলো আমরা করবো। তিনি আরও বলেন দেশটা তো আমাদের। প্রতিষ্ঠান যদি ভাল থাকে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন । আর ভালো না থাকলে পাঁচজন উপকৃত হবেন আর পঞ্চাশ জন বঞ্চিত হবেন। কাজেই প্রতিষ্ঠানটাকে ভালো করার কাজে আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যাই।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন আমাদের নৌপথের নাব্যতা স্বাভাবিক রাখার জন্য নদী বন্দর এলাকাগুলোতে ড্রেজিং করতে হবে। তিনি বলেন, নব্যতার সংকটে নৌপথে আমাদের বড় বড় লঞ্চ, স্পিড বোর্ড আটকে যায়। উত্তরবঙ্গে যে নদীগুলো ছিল এখন সে নদীগুলো মরে যাচ্ছে।রাজশাহীতে পদ্মা নদীর এপার থেকে ওপার হেঁটে যাওয়া যাচ্ছে। এখন ড্রেজিং করে নদীগুলোর নাব্যতা আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এর আগে সেমিনারে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন এবং ‘Water ways & Dried up rivers of Bangladesh’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদ মজুমদার বাবু সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ,বিআইডব্লিটিএ এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র)যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল এসময় উপস্থিত ছিলেন। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন আয়োজনে এবং পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, ভয়েস অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং কর্ণফুলী সুরক্ষা পরিষদের সহযোগিতায় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।