ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী (IDF) কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে “বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ” করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৭ এপ্রিল) দিনের বিভিন্ন সময় এইসব সমাবেশ পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)
সোমবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সোহেল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রক্টর ড. রাশেদুল আলম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ আরও অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জায়োনিজম নো মোর’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘হামাসের যোদ্ধারা, লও লও লও সালাম’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “একজন মানুষ হিসেবে মানবতার প্রশ্নে আমাদের করণীয় যা কিছু আছে, তা আমাদেরই করতে হবে। আমি একজন সাধারণ মানুষ, একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি—সেখানে গিয়ে হয়তো কিছু করতে পারবো না।
অধ্যাপক কামরুল আরও বলেন, তবে আমি সেইসব বিখ্যাত মানুষদের, যারা মানবাধিকার নিয়ে চিৎকার করেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই—মুসলমান বা অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের রক্ত যদি আপনাদের হৃদয়ে স্পর্শ না করে, তবে আপনারা প্রকৃতপক্ষে অধিকারকর্মী নন। আপনাদের এই অধিকারকর্মী পরিচয় আসলে পুঁজিবাদ টিকিয়ে রাখার কৌশল, পৃথিবী শাসনের কৌশল মাত্র। আজ গাজায় যে গণহত্যা হচ্ছে, তা কোনো অর্থনীতি বা রাজনীতি সমর্থন করে না। যে গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা গাজায় মানুষ হত্যা করছেন, শিশুদের হত্যা করছেন—সেই গাজার শিশুদের রক্ত আপনাদের স্বপ্রয়াসের বিপরীতে যায়। অনুগ্রহ করে আপনারা আগে মানুষ হোন, তারপর পৃথিবী শাসন করুন।”
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, “যারা নিজেদের মানবতার ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচয় দেয়, তারাই আজ গাজায় নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনের মুসলমানরা মানবিকতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েছিল। অথচ আজ সেই ইসরায়েল একের পর এক নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল আমি একটি ছবি দেখেছি—এক শিশুর মস্তিষ্ক ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে শরীর থেকে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রতিদিন আমাদের দেখতে হচ্ছে। এর চেয়ে বেদনাদায়ক কিছু হতে পারে না। আমি আরব বিশ্বের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানাই—আপনাদের বিবেককে জাগ্রত করুন।”
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, “আমি সৌদি আরবকে ঘৃণা করি, আমি আমেরিকাকে ঘৃণা করি এবং যেসব মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর এই অত্যাচার দেখেও নীরব থাকে, আমি তাদেরও ঘৃণা করি। ফিলিস্তিনি শিশুদের নির্মম মৃত্যু দেখেও যারা চুপ থাকে, আমি তাদের ঘৃণা করি। ইসরায়েলি সন্ত্রাসীদের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে না, আমি তাদেরও ঘৃণা করি। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের মুক্তির জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
এ ছাড়া সমাবেশে বক্তারা গাজায় চলমান বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যার নিন্দা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়া, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মিয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ সলিম মুহাম্মদ আব্দুল কাদিরসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গাজায় পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। পৃথিবীর কোন যুদ্ধ নীতিতে শিশু, অসহায় নারী, বৃদ্ধদের উপর হামলা করার নিয়ম নেই। পৃথিবীর এই সকল নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আজ বিশ্ব বিবেক, জাতিসংঘ, আরব লীগ, ওআইসি এবং সর্বোপরি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই গণহত্যার দৃশ্য বসে বসে দেখছে যা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও লজ্জাজনক।’
এ সময় গাজায় চালানো গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এসময় তারা ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
ফি’লি’স্তি’নি’দের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে সংহতি জানিয়ে “GlobalStrikeForGaza” কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষর্থীরা। সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে প্যালেস্টাইন পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগানের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের গুরত্বপূর্ণ সড়ক, সেই সাথে ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থিত এলাকা শেখপাড়া বাজরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে ইবি শিক্ষার্থীরা।
‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, Free Free Palestine, from the river to the sea, Palestine will be free” ‘দুনিয়ায় মুসলিম, এক হও লড়াই করো’, ‘বদরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব দে’, ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করো বন্ধ করো , ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য করো, ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েল ও নেতানিয়াহু সরকারকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
তারা বলেন, শুধু গাজাবাসী নয়, সমগ্র বিশ্বমানবতাই আজ দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হামলার শিকার। যেসব বিশ্বনেতারা সবসময় মানবতার কথা বলেন, আজ তারা নীরব। ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে তাদের মানবতার মুখোশ খুলে গেছে।
আরও বলেন, বিশ্ব মানবতার এই সংকটময় সময়ে আমাদের সবাইকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং যেকোনো মূল্যে দখলদার ইসরায়েলের কবল থেকে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে হবে। আর না হয় আমাদেরও ফিলিস্তিনিদের মতো এই নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে আর বেশিদিন লাগবে না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে ‘Global Strike for Palestine’। দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এবং বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক ক্লাবের সদস্যরা।
সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে শুরু হয় মানববন্ধন এবং একাত্মতা মিছিল। শিক্ষার্থীরা হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড এবং পোস্টার নিয়ে ‘Free Palestine’, ‘End the Occupation’, এবং ‘Stop the Genocide’ শ্লোগানে মুখর করে তোলে ক্যাম্পাস।
বিশেষ আয়োজন হিসেবে ‘Palestine Awareness Wall’ স্থাপন করা হয় ক্যাম্পাসের একাংশে, যেখানে শিক্ষার্থীরা লিখে যায় তাঁদের বার্তা ও অনুভূতি।সাথে ইস্ট ওয়েস্ট আর আইডিয়াল সহ বাড্ডার সকল জনগনের অংশগ্রহণ এ বিশাল র্যালির আয়োজন।