গাজায় দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার—বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত হয় এই মানববন্ধন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আবদুর রব, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল রানা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইরিন আক্তারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, মানবতার প্রশ্নে আমাদের করণীয় আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আমি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বড় কিছু না পারলেও, বিখ্যাত মানবাধিকারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই—যদি মুসলমান বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের রক্ত আপনাদের স্পর্শ না করে, তবে আপনারা সত্যিকারের অধিকারকর্মী নন। আপনাদের ‘মানবাধিকার’ আসলে পুঁজিবাদ ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল। আজ গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা কোনো রাজনীতি বা অর্থনীতিই সমর্থন করে না। যে ‘গণতন্ত্রের’ বুলি দিয়ে আপনারা শিশু হত্যা করছেন, তা আদতে মানবতার বিরুদ্ধে যায়। মানুষ হন, তারপর পৃথিবী শাসন করুন।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিনের জনগণের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ যে গণহত্যা চলছে, সেখানে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করছি। আমি মনে করি, এই গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের চেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে স্বৈরাচারী মার্কিন প্রশাসন এবং তাদের দোসররা। এটা কেমন কথা! যেখানে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে, অথচ সেই চুক্তি ভেঙে গণহত্যা চালানো হচ্ছে! আমরা এই মানববন্ধন থেকে বলতে চাই শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত, প্যালেস্টাইন মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, আমার জীবদ্দশায় এরকম ধ্বংসযজ্ঞ, এরকম মানবিক বিপর্যয় আমি কখনো দেখিনি, যা আমরা গাজায় প্রত্যক্ষ করছি। রাশিয়া যখন ইউক্রেনের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন পশ্চিমারা তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। কিন্তু বছরের পর বছর পশ্চিমাদের সহায়তায় দখলদার ইসরায়েল বাহিনী ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ফিলিস্তিনে বছরের পর বছর নির্মম অত্যাচার চলছে, সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, একটি জাতিকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আরব বিশ্বকে বলব—আপনারা এগিয়ে আসুন। আপনাদের হাতে অস্ত্র আছে, তেলের মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পদ আছে। পশ্চিমাদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করুন, প্রয়োজনে তেল রপ্তানি বন্ধ করুন। এই মুহূর্তে আমরা বিশ্বজনমত গঠন করতে পারি, এবং মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে পারি—ফিলিস্তিনি ভাইদের মুক্তির জন্য।
এই মানববন্ধন থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।